কাবুলের মন্দির আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছেন আফগানিস্তানের একমাত্র হিন্দু পুরোহিত রাজেশ কুমার, তালিবানি সন্ত্রাসে প্রাণের ভয় নেই তাঁর

কাবুলের মন্দির আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছেন আফগানিস্তানের একমাত্র হিন্দু পুরোহিত রাজেশ কুমার, তালিবানি সন্ত্রাসে প্রাণের ভয় নেই তাঁর

যেন বর্গি এল দেশে! আফগানিস্তান দখল করে নিয়েছে জঙ্গিগোষ্ঠী তালিবান। রাষ্ট্রপতি আশরাফ গনি পালিয়ে গিয়েছেন। ‘বর্গি’রূপী এই তালিবানের আতঙ্কেই দেশ ছেড়ে পালাচ্ছেন হাজার হাজার আফগানি জনগণ। কাবুলের বিমানবন্দরে থিকথিকে ভিড়। কিন্তু এত হুড়োহুড়ির মাঝে তিনি নেই। অথচ তাঁরই থাকার কথা ছিল সকলের আগে।

তিনি পণ্ডিত রাজেশ কুমার। আফগানিস্তানে টিকে থাকা সর্বশেষ হিন্দু মন্দির রত্তন নাথ মন্দিরের পুরোহিত রাজেশ কুমারকে বহুদিন ধরে বহু শুভাকাঙ্ক্ষী অনুরোধ করেছেন, দেশ ছেড়ে চলে যেতে, আত্মগোপন করতে। কারণ তালিবানি শাসনে তাঁর প্রাণের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।

কিন্তু পণ্ডিত অনড়। কিছুতেই তিনি তাঁর বাসভূমি ছেড়ে যাবেন না। পালিয়ে যাবেন না। নিজের প্রাণ বাঁচাতে কিছুতেই তিনি কাবুল ছাড়বেন না। তাতে যদি জঙ্গিদের হাতে মরতে হয়, তবে মরবেন,কিন্তু মন্দির ছেড়ে যাবেন না।

একসময় এই আফগানিস্তান ছিল শতভাগ হিন্দু ও বৌদ্ধ রাষ্ট্র। সন্ত্রাসীদের দ্বারা অত্যাচারিত হতে হতে ২০২০ সালে সেখানে আর হিন্দুর সংখ্যা কত ছিল বলুন তো? ১০লাখ? ১ লাখ? ৫০ হাজার? না, শুনলে অবাক হবেন। ২০২০ সালে এসে দেখা গেছে আফগানিস্তানে আর হিন্দু বাকী আছেন ৫০ জন! শিখ প্রায় ৬০০ জন।
অথচ এমনকি ৭০ এর দশকেও সেখানে ২ লাখের বেশী শিখ আর হিন্দু ছিল। এখন নেই ৭০০ জনও!

বৌদ্ধ আর ইহুদী সবাই পালিয়ে গেছেন অথবা মারা গেছেন। কেউ আর নেই। এইসকল বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সবাই তালিবান হামলায় মারা গেছেন, যারা বেঁচে ছিলেন সবাই পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন বিগত বছরগুলোতে।

রাজেশ কুমার বলেছেন, ‘অনেক হিন্দুরা আমায় কাবুল ছেড়ে যেতে বলেছেন। তাঁরা এমনকি আমার থাকার ব্যবস্থাও করে দিতে চেয়েছেন। কিন্তু আমার পূর্বপুরুষরা একশো বছর ধরে এই মন্দিরেই ভগবানের সেবা করেছেন। আমিও তাই করব। এই কাজ আমি ছাড়ব না। যাই হয়ে যাক। যদি তালিবান এসে আমাকে মেরে ফেলে, আমি মনে করব, এটাই আমার সেবা।’

এর আগে তালিবানের ভয়ে আফগানিস্তান ছেড়েছেন সে দেশের শেষ ইহুদি পুরোহিত জাবুলন সিমান্তব। হেরাতের একমাত্র ইহুদি উপাসনালয়ের দেখভাল করতেন তিনি। একসময় হেরাতে বহু ইহুদি বাস করতেন। আফগানিস্তানে ইহুদিদের ইতিহাস অন্তত ২ হাজার বছরের পুরনো। কিন্তু এখন আর কেউ নেই।

উল্লেখ্য যে আফগানিস্তানে কোনরকমে টিকে থাকা অবশিষ্ট হিন্দু ও শিখদের ভারত সরকার উদ্ধার করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের জন্য প্রার্থনা রইল ঈশ্বরের কাছে। রাজেশ কুমারের বীরত্ব দেখে মনুসংহিতার একটা কথাই মনে পড়ছে বারবার-

ধর্ম রক্ষতি রক্ষিতঃ
ধর্মের রক্ষককে ধর্মই রক্ষা করে।

ওঁ শান্তি শান্তি শান্তি

বাংলাদেশ অগ্নিবীর
সত্য প্রকাশে নির্ভীক সৈনিক

তথ্যসূত্র- The Wall

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.