বাংলার গর্ব বীরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়

বীরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় ( ৩১ অক্টোবর, ১৮৮০ – ৬ এপ্রিল ১৯৪৩) একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিপ্লবী। চট্টো নামে বিপ্লবী মহলে পরিচিত ছিলেন।

পিতা শিক্ষাবিদ ও ব্রাহ্ম সমাজ সংস্কারক অঘোরনাথ চট্টোপাধ্যায়। প্রথম ভারতীয় ডি এস সি। দিদি সরোজিনী নায়ডু দেশনেত্রী, ছোট বোন সুহাসিনী বোম্বাই ট্রেড ইউনিয়নের সংগঠক। অপর ভাই হরীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় একাধারে কবি, রাজনীতিজ্ঞ, নাটক ও চলচ্চিত্র জগতেও পরিচিত। বীরেন্দ্রনাথ বিবাহ করেছিলেন সোভিয়েত দেশে লিভিয়া এডোয়ার্ডেভনার কে।

১৯০১ সালে আই সি এস পরীক্ষা দিতে বিলেত গিয়ে সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তার আলাপ হয় প্রবাসী বিপ্লবী শ্যামজী কৃষ্ণ বর্মার সাথে। তার প্রতিষ্ঠিত পত্রিকা ইন্ডিয়ান সোসিওলোজিস্ট পরিচালনার দায়িত্ব ছিল বীরেন চট্টোপাধ্যায়ের হাতে। ১৯০৬ সালে বিখ্যাত তুর্কি নেতা মোস্তফা কামাল আতাতুর্কের সাথেও যোগাযোগ হয় এবং ভারতের জাতীয় মুক্তি আন্দোলনে তার সাহায্য প্রার্থনা করেন বীরেন্দ্রনাথ। ইউরোপে ব্রিটিশবিরোধী সংবাদপত্র ‘তলোয়ার’ এর সাথে জড়িত ছিলেন। ১৯০৯ সালে বিপ্লবী মদন লাল ধিংড়া কার্জন উইলিকে হত্যা করলে ধরপাকড় শুরু হয় এবং বীরেন্দ্রনাথ চলে আসেন প্যারিসে।

মাদাম কামা বা ভিকাজী রুস্তম কামা ও সর্দার সিং রানার সাথে তার আলাপ হয়, ফরাসী সোসালিস্ট পার্টিতে বীরেন্দ্রনাথও যোগ দেন ১৯১০ সালে। ভারতীয় ও বাংলার বিপ্লবীদের সাথে এই সময় তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল।

১৫ দফা চুক্তির ভিত্তিতে জার্মান সরকার ভারতীয় বিপ্লবীদের সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেয়। ভূপেন্দ্রনাথ ও অবিনাশচন্দ্র ভট্টাচার্যের চেষ্টায় ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স কমিটি গঠিত হয় যা ইতিহাসে বার্লিন কমিটি নামে পরিচিত। ১৯১৬ পর্যন্ত এই কমিটির সম্পাদক ছিলেন বীরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। ফ্রান্সে কাজ করার সময় নানা দেশের বিপ্লবী নেতাদের সাথে আগেই পরিচয় হয়েছিল, সেই সূত্রে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সুযোগ নিয়ে ভারতে সর্বাত্মক বিপ্লব প্রচেষ্টায় বীরেন্দ্রনাথ পৃথিবীর বহু দেশে যাত্রা করেন। গদর পার্টির বিপ্লবীরাও এতে সাড়া দেন।১৯১৬ তে ড. ভূপেন্দ্রনাথ দত্তকে সাথে নিয়ে ইস্তাম্বুল, আফগানিস্তান, তুর্কি যান। উদ্দেশ্য সশস্ত্র মুক্তিবাহিনী গড়া। যদিও তা সফল হয়নি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে বার্লিন কমিটির কার্যকলাপ শেষ হয়।

স্টকহমে ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে যে শান্তি সম্মেলন হয় তাতে যোগদান। ১৯২০ সালে বিপ্লবোত্তর রাশিয়ায় যান সমাজতন্ত্রের প্রতি গভীর আকর্ষনে। মস্কো সফরে তার সংগী ছিলেন আমেরিকান শ্রমিক নেত্রী এগনেস স্মেডলী। ১৯২১ সালে তৃতীয় আন্তর্জাতিকের তৃতীয় সম্মেলনে ভারতীয় বিপ্লবীদের পক্ষে যোগদান। ১৯২৬ এ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মাধ্যমে লর্ড সত্যেন সিংহের দ্বারা ভারতে ফেরার অনুমতি চেয়েও ব্যার্থ হন। ১৯২৭ এ ব্রাসেলসে জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির নেতা উইলি মুনজেনবার্গের পরিচালনায় যে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংঘ স্থাপিত হয় তার অন্যতম সম্পাদক ছিলেন বীরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। ১৯৩২ এ হিটলারের ক্ষমতা দখলের পূর্বেই সোভিয়েত বন্ধুদের পরামর্শে জার্মানি ছেড়ে রাশিয়ায় ফিরে আসেন এবং ১৯৩৩ এ যোগ দেন লেনিনগ্রাদ ‘ইন্সটিটিউট অফ এথনোগ্রাফি’তে ভারতীয় বিভাগের প্রধান পদে।

১৯৩৭ সালে রাশিয়ার সিক্রেট পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে অজ্ঞাত জায়গায় নিয়ে যায়। মৃত্যুর কারণ ও স্থান অজানা। ১৯৫৮ সালে ক্রুশ্চেভের আমলে তার বিধবা পত্নী কে জানানো হয় বীরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়’কে মরনোত্তর স্বীকৃতি প্রদান করা হচ্ছে। সোভিয়েত পার্টি কংগ্রেসের পূনর্বিচারে তিনি নীতিনিষ্ঠ কমিউনিস্ট হিসেবে পূর্ণ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত।

আনুষঙ্গিক চিত্র শিল্পী শ্রী শীর্ষ আচার্য

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.