টিকা শংসাপত্রে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ছবি সরানোর আর্জি খারিজ আদালতে, মামলাকারীকে ধার্য এক লক্ষ টাকা জরিমানা।

করোনা টিকাকরণ সার্টিফিকেটে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ছবি থাকা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন কেরলের এক ব্যক্তি। আর্জি জানিয়েছিলেন, টিকা সার্টিফিকেট থেকে যেন প্রধানমন্ত্রীর ছবি সরিয়ে ফেলা হয়। এ দিন কেরল হাইকোর্ট সেই আর্জি খারিজ করে দেয়। একইসঙ্গে মামলাটিকে “তুচ্ছ” ও “রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত” বলে আখ্যা দিয়ে মামলাকারীকে এক লক্ষ টাকা জরিমানা করল আদালত।

এ দিন মামলার শুনানিতে বিচারপতি পিভি কুনহিকৃষ্ণণ বলেন, “কেউ বলতে পারবেন না যে প্রধানমন্ত্রী কংগ্রেস বা বিজেপি কিংবা অন্য কোনও রাজনৈতিক দলের প্রধানমন্ত্রী। যখন সংবিধান মেনে কোনও প্রধানমন্ত্রীকে নির্বাচন করা হয়, তখন তাকে গোটা দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবেই গ্রাহ্য করা হয় এবং এই পদটি সকল নাগরিকের কাছে গর্বের হওয়া উচিত।”

গত শুনানিতেই আবেদনকারীকে বিচারপতি প্রশ্ন করেছিলেন, “টিকার শংসাপত্রে প্রধানমন্ত্রীর ছবি থাকায় আপনি এত লজ্জিত কেন? তিনি তো আমাদের প্রধানমন্ত্রী”। এদিনও সেই প্রসঙ্গই টেনে এনে বিচারপতি বলেন, “সরকারের নীতি বা প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে কেউ ভিন্নমত হতেই পারেন, কিন্তু কোনও নাগরিকেরই ভ্যাকসিন সার্টিফিকেটে প্রধানমন্ত্রীর ছবি থাকা নিয়ে লজ্জিত হওয়ার কিছু নেই। দেশবাসীকে মানসিক শক্তি জোগানোর জন্যই এই ছবি, বিশেষত এই মহামারির সময়ে লজ্জিত হওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই।”

মামলাকারীর অভিযোগের পিছনে কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে বলেই জানায় কেরল হাইকোর্ট। আদালতের নির্দেশিকায় বলা হয়, “এই আর্জির পিছনে কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। এটি কোনও উল্লেখ্যযোগ্য আর্জি নয়… এই আর্জি জনস্বার্থের জন্য নয়, বরং প্রচারের উদ্দেশ্যেই দায়ের করা। যখন আদালতে গুরুত্বপূর্ণ মামলা জমা পড়ে থাকে, সেই সময় এই ধরনের অপ্রয়োজনীয় আর্জিকে উৎসাহিত করা যেতে পারে না।”

আদালতের তরফে ওই মামলাকারীকে আগামী ছয় সপ্তাহের মধ্যে কেরল রাজ্য আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের কাছে এক লক্ষ টাকা জরিমানা জমা করতে বলা হয়েছে। যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তিনি ওই টাকা জমা না দেন, তবে তাঁর সম্পত্তি বিক্রি করে সেই টাকা আদায় করা হবে বলে জানিয়েছে আদালত।

পিটার মায়লিপারামপিল নামক ওই ব্যক্তি তথ্যের অধিকারের অধীনে এই মামলাটি দায়ের করেছিলেন। তাঁর যুক্তি ছিল, যখন সাধারণ মানুষকে বেসরকারি হাসপাতালে টাকা দিয়ে করোনা টিকা নিতে হচ্ছে, তবে সার্টিফিকেটে প্রধানমন্ত্রীর ছবি কেন থাকবে? এতে নাগরিকের মৌলিক অধিকার খর্ব করা হচ্ছে বলেও তিনি দাবি করেন।

তাঁর আরও ব্যাখ্যা ছিল, শংসাপত্র বা সার্টিফিকেট একটি গোপনীয় তথ্য যেখানে কারোর ব্যক্তিগত তথ্য বা রেকর্ড থাকে। কোনও ব্যক্তির গোপনীয়তায় হস্তক্ষেপ করা অনুচিত। যদিও আদালতের তরফে তাঁর যাবতীয় দাবিকে উড়িয়ে দিয়ে আদালতের তরফে বলা হয়, “আপনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে লজ্জিত কেন? উনি জনসমর্থনেই ক্ষমতায় এসেছেন…আমাদের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা হতেই পারে, তবুও উনি আমাদের প্রধানমন্ত্রী।”

অন্য দেশের টিকা সার্টিফিকেটে কেন তাদের প্রধানমন্ত্রীর ছবি নেই, এই প্রশ্নের জবাবে আদালতের তরফে বলা হয়, “ওনারা নিজেদের প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে গর্বিত নাই হতে পারেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে গর্বিত।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.