বিরোধীরা চোখ মেলেও শুধু অন্ধকার দেখছেন

যে সংগঠনের সঙ্গে ধর্মশক্তি, আদর্শশক্তি ও মহাপুরুষদের তপোশক্তি রয়েছে তাকে কে হারাতে পরে? বিশ্ব সংসারে সম্ভবত এরকম উদাহরণ কমই দেখা যাবে যে ৯০ বছর আগে শুরু হওয়া এক ভাবনাত্মক আন্দোলন তাদের দু-দুজন কার্যকর্তাকে শুধু প্রধানমন্ত্রীর গদি পর্যন্তই পৌছে দেয়নি, উপরন্তু দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের পাথেয়ও নির্মাণ করেছে। এরকম একটি শক্তিকে নষ্ট করার একটাই উপায়, যদি সে স্বয়ং অহংকার ও জাতিবিদ্বেষের শিকার হয়ে নিজের সর্বনাশ ডেকে আনে, অন্যথায় পৃথিবীর কোনো শক্তি এই আদর্শশক্তিকে এগিয়ে যেতে ও বিজয়ী হওয়া থেকে আটকাতে পারবে না।
বর্তমানে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী যুদ্ধ শুধু দুজন ব্যক্তির মধ্যে নয় বা এক দল বনাম অন্য দলের নয়। এই যুদ্ধ নিশ্চিত করবে যে, ভারত ভারত থাকবে না থাকবে না। যখন পাঞ্চজন্য ও অর্গানাইজার পত্রিকার সম্পাদক তথা ‘রগ রগ হিন্দু মেরা পরিচয়’ কবিতা লেখা কানপুর থেকে গ্র্যাজুয়েট হওয়া যুবক প্রচারককে জনসঙ্ঘে পাঠানো হয়েছিল, তখনও অন্ধকার গভীর ছিল, চ্যালেঞ্জ খুব তীব্র ছিল, কষ্ট ও সংঘর্ষ অধিকমাত্রায় ছিল। সেজন্য কাজ করার মজাও আলাদা ছিল। তখন পায়ে হেঁটে অথবা সাইকেলে সংগঠনের কাজ করতে হতো। কিন্তু দায়বদ্ধতা ছিল, জিদ ছিল। সবাইকে নিজের মনে হতো। অপরিচিতকেও আপন করে নেবার আকাঙ্ক্ষা ছিল। টাকাপয়সার আবশ্যকতাখুব একটা মনে হতো না। ‘সওয়া লাখ সে এক লড়াউঁ’ ভাব মনে সবসময় খেলা করত। ঐশ্বর্যের দ্বারা আদর্শ বৃদ্ধি পায় একথা কেউ কোনোদিন মনে করেনি। কিন্তু শত্রুকে পরাস্ত করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে উপকরণ তো প্রয়োজনই। আজ ধর্মবল, আদর্শবল ও তপস্যাবলের ওপর প্রকাশ্য চ্যালেঞ্জ স্বীকার করতে হচ্ছে।
কিন্তু আমরা তো ঘরপোড়া গোরু। কোথাও যা কিছু হোক, হার বা জিৎ– আমরা হিন্দুদের কান্না এবং হিন্দুদের সংখ্যা কমে যাওয়াই দেখতে পাচ্ছি। আসন যত খুশি আসুক, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে হিন্দুর সংখ্যা কমে যাওয়া এবং বিদেশি ধন ও ধর্মান্তরণের বিস্তার তো কমেনি। কাশ্মীরে হিন্দুরা ফিরে যেতে পারেনি। দক্ষিণ ভারতে হিন্দু মন্দিরের ওপর বিধর্মীদের কবজা জারি রয়েছে। ভোটে শুধু জিজ্ঞেস করা হয় তুমি কোন জাতির আর তোমার কাছে কত টাকা আছে? কিন্তু এই লড়াই তো তাদের নয় যারা দেশে বিদ্বেষ ছড়ানোর জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছেন। প্রকৃতি বহু অহংকারের ফয়সালা করবে। এই লড়াই তাদের যারা মৃত্যুর আগে পর্যন্ত সমস্ত শক্তি দিয়ে ভারতকে বাঁচাতে চান। বিরোধীরা নিয়মশৃঙ্খলাহীন। তারা পরাজয়ের শেষ সীমায় দাঁড়িয়ে। তারা এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে এখন ক্ষমার অযোগ্য। তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে না। নির্মম হতেই হবে। নিজের মান-অভিমান সবকিছু ভুলে গিয়ে এখন একটা কথাই মনে রাখতে হবে যে, এবার কোনো ভাবে যেন সরদার প্যাটেলের স্থানে নেহরুর চয়ন না হয়। অটলবিহারী বাজপেয়ীর স্থানে যেন বিদেশির ডোরে বাঁধা কাঠপুতুল না এসে পড়ে। ঈর্ষা ও পারস্পরিক বিদ্বেষ এবং পছন্দ অপছন্দের টানাপোড়েনে পানিপথের পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে।
সব কিছু ঠিক চলছে। কিছু কম-বেশি আগামীবার সম্পন্ন করা যাবে। বিরোধীরা পিছনে হঠছে কিন্তু দেশ এগিয়ে চলছে। গরিব মহিলারা পেয়েছেন উজ্জ্বলা যোজনায় রান্নার গ্যাস ও আলো। তারফলে তাঁদের উনুনের ধোঁয়া ও রাতের অন্ধকার দূর হয়েছে। কিন্তু কিছু লোকের আলো পছন্দ নয়, তারা অন্ধকারেই খুশি থাকেন। এরকম শুধু নােংরা ঘাঁটা লোকেদের গান্ধীজী বলেছেন- ‘গাটার ইন্সপেক্টর’। তাদের কাজই নােংরা খুঁজে বেড়ানো। বাগানে বসন্ত এসেছে, ফুল ফুটেছে, সুগন্ধ বইছে, কিন্তু গাটার ইন্সপেক্টর শুধুই নােংরা খুঁজে বেড়ায়- পচা ও দুর্গন্ধ নােংরা।
একটি গল্প বলছি। এক সজ্জন ছিলেন। তিনি শুভ কাজে, উৎসব-অনুষ্ঠানে অশুভ ও অমঙ্গলের কথা বলতেন। তার ব্যবহারে লোক বিরক্ত হয়ে নিমন্ত্রণ করা বন্ধ করে দিয়েছে। তিনি অন্য জায়গায় চলে গিয়েছেন। নতুন এসেছেন, লোকেরা তাঁর সম্পর্কে জানতো না। এক ব্যক্তি তার গৃহপ্রবেশ অনুষ্ঠানে তাকে ডেকেছেন। সেই সজ্জন খুব খেয়েদেয়ে ঢেকুর তুলতে তুলতে গৃহস্বামীকে বললেন, আপনি তে দারুণ বাড়ি বানিয়েছেন। গৃহস্বামী বললেন, এই আর কী। সেই সজ্জন বললেন, কিন্তু দরজাটি খুব ছোটো করেছেন। গৃহস্বামী বললেন, পাহাড়ে দরজা এরকম ছোটোই হয়। সজ্জন বললেন, না, মানে কাল যদি আপনার বাড়ির কেউ মারা যায় তখন প্রার্থনাকারীদের বের হতে কষ্ট হবে।
দুর্ভাগ্যবশত আমাদের দেশের বিরোধীরা এরকম। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে তারা দেখতে পাচ্ছেন না। সুখী কৃষক-মজুর-গৃহিণীদের এরা দেখছেন না। কৃষকদের দু’ শতাংশের মতো নগণ্য সুদ দেওয়া হচ্ছে কিন্তু এক লক্ষ টাকা ঋণের কথা বলা হচ্ছে না। বিশ্বে সবাই রক্ষক অর্থাৎ চৌকিদারের অভাব অনুভব করে। কিন্তু এখানে বিরোধীরা বলে চৌকিদার চাই না। চৌকিদারের প্রয়োজনই নেই। দরজা খুলে রাখো, চৌকিদার হঠিয়ে দাও– যাতে আমাদের একটু সুবিধা হয়। খুব মুশকিল হয়েছে বিরোধীদের। যখন থেকে মোদী এসেছেন তাদের রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। দরজায় লাঠি হতে চৌকিদার দাঁড়িয়ে আছেন— বার বার ‘হুঁশিয়ার’ বলছেন।
হুঁশিয়ার থাকো, চৌকিদার দাঁড়িয়ে আছেন— চোরেদের খুব দুর্দশা। তারা বলছে চৌকিদারের কী প্রয়োজন? তাদের মনে হচ্ছে চৌকিদার কোনো মাফিয়া। এই মাফিয়া শব্দ কোন দেশ থেকে এসেছে আপনারা জানেন। গড ফাদার ফিল্ম আপনারা দেখে থাকবেন— সেও চৌকিদারের বিরুদ্ধে ছিল, আমাদের বিরোধীরাও চৌকিদারের বিরুদ্ধে।

তরুণ বিজয়
(লেখক রাজ্যসভার পূর্বতন সাংসদ)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.