শ্রী ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রয়াণ দিবসে

শ্রী ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রয়াণ দিবসে –

বাঙ্গালী বহুকাল তাঁকে বিস্মৃত হয়েছে সব অর্থে: তাঁর জীবনাদর্শ, তেজস্বীতাকে রসাতলে পৌঁছে আপসের নিশ্চিত নিরাপত্তার আচ্ছাদনে বিদ্যমান থাকার জন্যই। এবং যে মূহুর্ত থেকে এই মনোবৃত্তি তার নৈতিক চরিত্রকে গ্রাস করেছে, পলকের মধ্যেই সূত্রপাত হয়েছে অবশ্যম্ভাবী ধ্বংসের যা আজ সর্বগ্রাসী। অন্তত হিন্দু ঊচ্চবর্ণের ক্ষেত্রে এই শ্রম বিমুখতা, অনর্থক অদৃষ্টবাদ ও পলায়নী মনোবৃত্তি এতো প্রকট আজ যে এই আদ্যন্ত আচারনিষ্ঠ, প্রখর আত্মমর্যাদাসম্পন্ন, শ্রমকুশল, তীক্ষ্ণ ও কুসংস্কারহীন ব্রাহ্মণ যাঁর সমগ্র জীবন ওজঃ – এর প্রতিশব্দ, তাঁর সম্পর্কে এযুগের এক বাঙ্গালী হিন্দু হয়ে লিখতে বড়ই আত্মগ্লানি দ্বারা পীড়িত হতে হয়। কথিত আছে, তিনি অজ্ঞেয়বাদী কিন্তু পত্র রচনার প্রারম্ভ হত দুর্গাকে স্মরণ করে।

.. simple living and high thinking র যথার্থ অর্থোদ্ধার করতে গেলে পাশ্চাত্য জগতের প্রয়োজন থাকেনা, তাঁর জীবনশৈলীকে অনুসরণই যথেষ্ট। তিনি শিক্ষাবিদ: একইদেহে সমাজসংস্কারক, গ্রন্থ ব্যবসায়ীও বটে। একথা সম্ভবত সকলেই বলে থাকেন। কিন্তু যা অনেকেই বলেন না, শুধুমাত্র তাঁর প্রতিকৃতিকে বিদ্যালয় বা গ্রন্থাগারে অশ্রদ্ধার সাথে বক্র করে রাখেন – তা হল বাংলা ভাষাকে সার্বজনীন করে তোলার ক্ষেত্রে তাঁর আপ্রাণ প্রয়াস সর্বজনবিদিত ও ঐতিহাসিক: বঙ্গদেশে আর্য সনাতন হিন্দুর প্রকৃত জীবনাদর্শের রক্ষাকর্তাও অনেকাংশে তিনিই।

যে জাতি নারীকে উপাসনা করেছে সহস্র সহস্র বৎসর শক্তির আধার রূপে, তারাই যখন জীমূতবাহনের দায়ভাগ শাসিত বঙ্গদেশে অশাস্ত্রীয় চিন্তাধারা ও দেশাচারের প্রভাবে নারীর বিকাশের পথ রুদ্ধ করে ও তাকে মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য করে এবং তদ্বারা সর্বনাশ করে জাতীয় অগ্রগতির তখনই প্রয়োজন হয় বীরসিংহের এক যথার্থ দেশপ্রেমিককের সিংহগর্জন, প্রতিবাদ, দুর্দান্ত প্রতিরোধের ও ঐতিহাসিক বিজয়ের।

বঙ্গের শ্রেষ্ঠ বলীদের মধ্যে অন্যতম তিনি: শক্তি চর্চার ভূমিকা জাতির জীবনে কি তা অনুভব করে স্বয়ং সংস্কৃত কলেজে আরম্ভ করেছিলেন strength training র পাঠ। কুস্তির আখড়া তৈরীর জন্য তিনি শুধু সহস্তে মাটি কোপাননি, শ্রী শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্নের মতো পরবর্তীকালের প্রণম্য পন্ডিতদের বাধ্য করেছিলেন তাতে প্রতিদিন অংশগ্রহণ করতে।

আমরা তাঁকে, তাঁর নির্দেশিত পথকে অগ্রাহ্য করে প্রতিনিয়ত আপন চিতা প্রস্তুত করতেই ব্যস্ত আছি – বর্তমানে এই হল বাঙ্গালীর কলঙ্কজনক পরিচয়।

প্রণমামি মুহুর্মুহু।।

অনিমিত্র চক্রবর্তী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.