এখন যাঁরা মমতার কাছে থাকেন ? মমতাকে প্রকৃত বামপন্থী নেত্রী বলে কলম ধরেন বা মুখ খোলেন তাঁরা কি কারণে এতটা অনুপ্রাণিত হন ? বা মমতার হয়ে অন্ধ ওকালতি করেন তাঁরা কি কোন আদর্শে চালিত ?

বাংলার বুদ্ধিজীবীদের বাম আমলের শেষ দিকে বলা হত বুদ্ধজীবি । কারণ ছিল খুব সহজ বোধ্য । বামপন্থী হওয়ার কারণে এঁদের অনেকেই বুদ্ধবাবুর প্রিয়পাত্র ছিলেন । গল্পে, আড্ডায়, কবিতায়, নাটকে, নন্দনে এঁরা বুদ্ধবাবুর কাছে চলে যেতে পারতেন । সংপৃক্ত হয়ে যেতেন । এঁরা মুখ খুললে বা কলম ধরলে বামেদের প্রতি আনুগত্য দেখাতেন কিন্তু বামপন্থী হওয়ার কারণে । ফলে বাজারে নিতে হত এই তকমা “বুদ্ধজীবি” । কিন্তু বৈষয়িক বা আর্থিক কারণে এঁরা কেউই কোনোদিন বুদ্ধজীবি হননি । তাঁদের শত্রুরাও এ কথা চট করে এঁদের সম্বন্ধে কোনোদিন বলেন নি ।

কিন্তু এখন যাঁরা মমতার কাছে থাকেন ? মমতাকে প্রকৃত বামপন্থী নেত্রী বলে কলম ধরেন বা মুখ খোলেন তাঁরা কি কারণে এতটা অনুপ্রাণিত হন ? বা মমতার হয়ে অন্ধ ওকালতি করেন তাঁরা কি কোন আদর্শে চালিত ? প্রশ্নটার উত্তর খুঁজেছি বহুদিন ।

মমতা যখন ২০০৯ এ কেন্দ্রে রেলমন্ত্রী ছিলেন সে সময় রেলের পরামর্শদাতা কমিটিতে বাংলা থেকে প্রচুর এ জাতীয় বুদ্ধিজীবী ঢুকিয়ে ছিলেন । কাজ কি ছিল এঁদের ? প্রয়োজনে রেলকে পরামর্শ দেওয়া । ন মাসে ছ মাসে একটা সভা, তাও আবার কলকাতায় । রেলের পরামর্শদাতাদের সভা । কে ছিলেন না সেই কমিটিতে ? শুভাপ্রসন্ন, শাওলি মিত্র, অর্পিতা ঘোষের মত অগুন্তি মমতার প্রিয়পাত্রীরা । এঁদের রেল থেকে মাসে পাওনা মিলত প্রায় দেড় লাখ । ঘরে বসে টাকা আর কি । এঁরা বাইরে এসে চালিয়ে খেলতেন । বাংলার সংবাদ মাধ্যমে এঁদের পরিচয় ছিল শিল্পী সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবী । ঠোঁট কাটা অরুণাভ ঘোষ যাঁদের বলতেন এঁটো কাটা কমিটির সদস্য ।

এখন মমতা ক্ষমতায় । এখন কি ভাবে এঁদের রসে বসে রাখেন কেউ খবর রাখেন ? একটা উদাহরণ দিই । জয় গোস্বামী । খ্যাতিমান কবি । প্রতিভাবান । মমতা নিয়ে গিয়ে বসিয়ে দিলেন নজরুল একাডেমির মাথা করে । মাসে এটা ওটা মিলিয়ে আড়াই লাখের গল্প । নন্দন চত্বরে অফিস । নীল আলো জ্বালানো গাড়ি । সিকিওরিটি । ফ্রি ট্রাভেলার । কাজ কি ? কেউ জানেন ? বলতে পারবেন ?

সম্প্রতি জয় গোস্বামী করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন । AMRI থেকে কোভিড টেস্ট করালেন । বিল হয়েছিল ৪,৮০০ টাকা । দিল কে ? নবান্ন । AMRI থেকে প্রথমে চিকিৎসা করিয়ে বিল পাঠালেন নবান্নে । মেটালো কে ? নবান্ন । কত টাকা ১ লক্ষ ১৮ হাজার ৬৬৫ টাকা । ফাইন্যান্সিয়াল assistance to distressed person খাতে দান গ্রহণ করলেন জয় । ১২ জুলাই নবান্ন থেকে স্পেশ্যাল সেক্রেটারি ইও, তথ্য সংস্কৃতি দফতর মেমো নং ১৯৭৫- আই সি এ (এন) ইস্যু করে টাকা পাঠালেন নগদে ।

প্রশ্ন হল পারতেন না জয় গোস্বামী টাকাটা নিজে মেটাতে ? যে মানুষটা রয়ালটি এবং নজরুল একাডেমির প্রধান হিসেবে মাসে কয়েক লাখ টাকা রোজগার করেন তিনিও পাবলিক মানি এভাবে বিল জমা দিয়ে নিলেন ? মমতাও দিলেন ? সব জেনে ? এবসলিউট আনুগত্য মমতা কিভাবে কেনেন এরপরও বলতে হবে ?

এরপর নির্বাচন হোক, কোন রাজনৈতিক সংকট আসুক, আনন্দবাজারে পোস্ট এডিট লিখতে হোক, পারবেন জয় গোস্বামী শাসকের বিরুদ্ধে কলম ধরতে ? সত্যি কথাটা লিখতে । যেটা শাসককে সতর্ক করতে পারবে ?

আসলে এভাবেই সত্ত্বা, প্রতিভা সব কিছু সাইলেন্টলি সারেন্ডার করে, বশ মানে অর্থ আর প্রলোভনের কাছে । তাই নির্বাচনোত্তর সংঘর্ষে ৪২ টি পরিবারে সিঁথির সিঁদুর মুছলে এই জয় গোস্বামীরা চুপ থাকেন । স্ট্যান স্বামীর দুঃখ জনক মৃত্যু হলে এই জয় গোস্বামীরা আনন্দবাজারে কলম ধরে লেখেন – ভারতের কেন্দ্রীয় শাসকদের প্রতি সুগভীর ধিক্কার জানাই ।

বাংলার গরীব মানুষগুলোকে হত্যা করা মৃত্যু নয়, স্ট্যান স্বামীর মৃত্যুই শুধু মৃত্যু । এক কবির কলমে যখন এই বোধ প্রতিভাত হয় তখন কেন হয়, কি কারণে হয় কেউ কি বুঝতে পারেন না ??

সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় ( ৯৮৩০৪২৬০৭৮ )

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.