বেলঘরিয়া স্টুডেন্টস হোমের তিনটি বিভাগ ছিল। পলিটেকনিক কলেজ (শিল্পপীঠ), কমিউনিটি পলিটেকনিক আর রেল ব্রিজের ওপারে স্বামী বিজ্ঞানানন্দজীর বাড়ী। সবগুলোর কাজ পূজনীয় স্বামী অমলানন্দজী অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করতেন। তাঁর ভগ্নস্বাস্থ্য, রাজনৈতিক দলের দেওয়া পীড়ন সব উপেক্ষা করে সবকিছু অত্যন্ত সুচারু ভাবে পরিচালনা করতেন। শিল্পপীঠকে তিনি নিজের আত্মজ-র মতো ভালবাসতেন। কলেজের প্রতি কোণা ছিল তাঁর পরিচিত। আমরা ভাবতুম যদি কোনদিন মহারাজকে শিল্পপীঠের কাজ ছেড়ে দিতে বলা হয়, উনি বোধহয় শোকেই মারা যাবেন। ঘটনাও তাই হলো।

এপ্রিল ১৯৯৭ সালে বেলুড় মঠের কর্তৃপক্ষ মহারাজের ভগ্ন স্বাস্থ্যের কথা ভেবে শুধু কলেজের দায়িত্ব ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেন। মহারাজ দ্বিরুক্তি না করে রাজী হয়ে গেলেন। মঠের চিঠি পাওয়ামাত্র আমাকে নিয়ে বসলেন খসড়া করতে কি কি জিনিস নতুন সম্পাদককে জানাতে হবে। একটা নতুন ডায়েরি তে সেসব লেখা হতে থাকলে। মহারাজ ডুবে থাকলেন তাতে। ১৬ই জুন ১৯৯৭ দায়িত্ব হস্তান্তর হবার আগে মহারাজের সব কাজ শেষ। গভর্নিং বডির মিটিং ডাকার আগেই সব রেসলিউশন তৈরী। দায়িত্ব হস্তান্তরের সই আর নোটিশে সই ছিল শেষ কাজ।

পরের দিন থেকে মহারাজ একেবারে মুক্ত। কাজ পাগল মানুষ মেতে গেলেন রামকৃষ্ণ মিশনের শতবার্ষিকী স্মারক ও ডিসেম্বরের রিইউনিয়নের সুভেনির তৈরীর কাজে। কলেজের ফাইল খাতা সব ওনার ঘরে যেমন থাকত তেমনি রইল কিন্তু মহারাজ সে বিষয়ে সামান্যতম কৌতুহল দেখাতেন না। স্টুডেন্টস হোমের কাজ, নিত্য ক্লাশ নেওয়া, পড়াশোনা যা তিনি আগেও করতেন তাতেই ডুবে থাকলেন। কলেজে ক্লাশ শেষ হয়ে গেলে যেমন বোর্ড মুছে পরিষ্কার করে দেওয়া হয় ঠিক তেমনি যেন ৪০ বছরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় মহারাজ তাঁর জীবন থেকে মুছে ফেললেন, একেবারে।

জীবনের অন্তিম লগ্নে এসে উপলব্ধি করেছি, এর নাম অনাসক্তি।

  • স্বামী স্তবপ্রিয়ানন্দ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.