করোনার মারাত্মক প্রজাতিরা ছেয়ে গেছে, টিকার দুটি ডোজের পরেও ‘বুস্টার শট’ লাগবে: এইমস প্রধান

কোভিডের ডেল্টা প্রজাতিই ঘুম উড়িয়ে দিয়েছে। এর পরেও অন্য কোনও সংক্রামক প্রজাতি হানা দেবে কিনা সে নিয়েও রীতিমতো উদ্বেগে রয়েছেন দেশের বিজ্ঞানীরা। এই প্রসঙ্গে দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেসের (এইমস) প্রধান ডক্টর রণদীপ গুলেরিয়া বলেছেন, যেভাবে কোভিডের সুপার-স্প্রেডার প্রজাতিরা ছড়িয়ে পড়েছে তাতে ভ্যাকসিনের দুটি ডোজে রক্ষা নেই। তৃতীয় বুস্টার ডোজও দরকার পড়বে। কোভিড টিকার বুস্টার ডোজের ক্লিনিকাল ট্রায়ালও শুরু হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

এইমস প্রধান বলছেন, ঘন ঘন রূপ বদলাচ্ছে সার্স-কভ-২ ভাইরাস। করোনার ব্রিটেন স্ট্রেন ও দক্ষিণ আফ্রিকার স্ট্রেন নিয়ে একসময় উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল। এই দুই প্রজাতির থেকে বাঁচার উপায় নিয়ে যখন ভাবনাচিন্তা চলছে, তখনই শোনা যায় ভাইরাস আবার জিনের গঠন বিন্যাস বদলে ফেলে নতুন চেহারা নিয়েছে। কোভিডের সেই ডেল্টা প্রজাতি ভারতে নয় বিশ্বের বহু দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এরপরেও ডেল্টা প্রজাতির ফের জিনগত বদল বা মিউটেশন হয়ে ডেল্টা প্লাস তৈরি করে। এদেরও আবার বিভিন্ন উপপ্রজাতি রয়েছে। গুলেরিয়া বলছেন, করোনার এতরকম সংক্রামক প্রজাতি তৈরি হয়ে গেছে যে ভ্যাকসিনের দুটি ডোজের পরেও শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তি আরও বাড়াতে তৃতীয় ডোজও দরকার পড়বে। আর এই তৃতীয় ডোজ হবে সেকেন্ড জেনারেশন ভ্যাকসিনের শট বা বুস্টার শট।
ভ্যাকসিন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভাইরাসের জিনোম সিকুয়েন্স করে বা জিনের বিন্যাস সাজিয়ে যেমনটা দেখে ভ্যাকসিনের ফর্মুলা তৈরি হয়েছিল, সেই জিনের বিন্যাসই এখন বদলে গেছে। যদিও ভ্যাকসিনে কাজ হবে ঠিকই, কিন্তু সারা বছর সংক্রামক ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে শরীরের ইমিউনিটি সেই পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। এর জন্যই দরকার এই তৃতীয় ডোজ।
ভ্যাকসিনের তৃতীয় ডোজ হবে ‘বুস্টার’, অর্থাৎ শরীরের ইমিউন পাওয়ার বা রোগ প্রতিরোধ শক্তিকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেবে। সাধারণত, ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ শরীরে ঢুকে ইমিউন কোষগুলোকে (বি-কোষ ও টি-কোষ) সক্রিয় করার চেষ্টা করে। দেহকোষে ভাইরাস প্রতিরোধী সুরক্ষা বলয় তৈরি করার জন্য ইমিউন কোষগুলোকে অ্যাকটিভ করা শুরু করে। দ্বিতীয় ডোজে এই কাজটাই সম্পূর্ণ হয়। বি-কোষ সক্রিয় হয়ে প্লাজমায় অ্যান্টিবডি তৈরি করে। অন্যদিকে, টি-কোষ বা টি-লিম্ফোসাইট কোষ সক্রিয় সংক্রামক কোষগুলিকে নষ্ট করতে শুরু করে। দুই ডোজের পরে যে অ্যান্টিবডি শরীরে তৈরি হয় তাই ভাইরাস থেকে সুরক্ষা দেয়। কিন্তু এই অ্যান্টিবডি কতদিন শরীরে টিকে থাকছে সেটাই হল আসল প্রশ্ন। বিজ্ঞানীরা কখনও বলছেন, করোনা প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি তিন মাসের বেশি থাকছে না, ঝপ করে কমে যাচ্ছে। আবার কখনও দাবি করা হচ্ছে, অ্যান্টিবডি কম করেও সাত মাস টিকে থাকছে। অ্যান্টিবডির স্থায়িত্বকাল যেহেতু কম তাই দুই ডোজে ভরসা না করে বুস্টার ডোজ দরকার। ভ্যাকসিনেশনের প্রায় এক বছর পরে যদি এই বুস্টার দেওয়া হয়, তাহলে আবারও শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হবে, আরও কয়েকমাস ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা পাওয়া যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.