কংগ্রেস উঁচুতে থাক, আমরা মাটিতে থেকে কাজ করি, সংসদে কটাক্ষ মোদীর

সপ্তদশ লোকসভার অধিবেশন শুরুতে রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপর গত কয়েক দিন আলোচনা চলেছে সংসদে। মঙ্গলবার জবাবি ভাষণ দিতে উঠে দীর্ঘ বক্তৃতা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই বক্তৃতায় নিজের প্রথম সরকারের বড়াই যেমন শোনা গেল প্রধানমন্ত্রীর গলায়, একই ভাবে কংগ্রেসকেও তোপ দাগলেন অনেক টা সময় নিয়ে। কংগ্রেসের উঁচুতে থাকার বক্তব্য নিয়েও কটাক্ষ করলেন মোদী।

বক্তৃতা করতে গিয়ে কংগ্রেসের লোকসভার দলনেতা তথা বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধুরী তুলোধনা করেছিলেন মোদীকে। নিজের দল সম্পর্কে বলতে গিয়ে অধীরবাবু বলেছিলেন, “কংগ্রেস রুগ্ন হয়েছে ঠিকই। কিন্তু এখনও উচ্চতাতেই রয়েছে।” সেই রেশ ধরেই এ দিন জবাব দেন মোদী। বলেন, “কংগ্রেস আরও উঁচুতে থাকুক আমরা এটাই চাই। এতটাই উঁচুতে কংগ্রেস রয়েছে, তার সঙ্গে জমির কোনও সম্পর্ক নেই। কিন্তু এই সরকার মাটিতে থেকে কাজ করে। গভীরে ঢুকে কাজ করে।” মোদীর আরও কটাক্ষ, “কংগ্রেস যত উঁচুতে উঠবে, তত এই সরকারের ফায়দা হবে।”

মঙ্গলবার, ২৫ জুন ছিল জরুরি অবস্থার বর্ষপূর্তি। ১৯৭৫ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এই দিনেই জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিলেন। এ দিন তা নিয়েও কটাক্ষ করেন মোদী। বলেন, ‘‘আজ ২৫ জুন। এই দিনেই দেশের আত্মাকে পিষে মারা হয়েছিল।” সেই সময়কার পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে মোদী বলেন, “সাংবাদিকদের জেলে পোরা হয়েছিল। নেতাদের বন্দি করা হয়েছিল। সাধারণ মানুষের মধ্যে এমন আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল যে, সেই আতঙ্কের কথা মনে হলে এখনও আত্মা কেঁপে ওঠে।”

অধীর চৌধুরী মোদীর উদ্দেশে চ্যালেঞ্জের সুরেই বলেছিলেন, “পারলে গান্ধী পরিবারের সদস্যদের দূর্নীতি বার করে জেলা পাঠান।” এ দিন তারও জবাব দেন মোদী। ও দিকে তখন কংগ্রেস বেঞ্চে সনিয়া গান্ধী এবং রাহুল গান্ধী দু’জনেই বসা। মোদী বলেন, “আমরা কাউকে জেলে পুরতে চাই না। কেউ কেউ তো জামিন পেয়ে বাইরে রয়েছেন (ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় জামিনে রয়েছেন সনিয়া)। এনজয় করুন।”

জবাবি ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দেশবাসী আরও বেশি বিশ্বাস রেখেছে এই সরকারের উপর। তাই এই সরকার পথভ্রষ্ট হবে না। হারিয়েও যাবে না।” গত পাঁচ বছরের খতিয়ান তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বিদ্যুৎ, রান্নার গ্যাস ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে পেরেছে বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, “মানুষ না চাইলেও সরকার সেই সুবিধা পৌঁছে দিয়েছে। তাই মানুষ বলে, কেন করছেন? কিন্তু আগে (কংগ্রেস জমানা) বলতেন কেন করছেন না।”

ক্ষমতায় আসার পর এক মিনিটের জন্য বসে থাকেনি তাঁর সরকার। এমনই দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “গত ৩ সপ্তাহের মধ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে। চাষি, ছোটো ব্যবসায়ীদের জন্য পেনশন, জওয়ান ও পুলিসদের সন্তানদের বৃত্তি-সহ একগুচ্ছ প্রকল্প চালু করে দেওয়া হয়েছে।”

রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ তাঁর বক্তৃতায় বলেছিলেন, “স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তিতে এবং মহাত্মা গান্ধীর ১৫০তম জন্ম বার্ষিকীকে যেন মর্যাদার সঙ্গে পালন করে সরকার।” এ দিন মোদী বলেন, “ইভিএমে বোতাম টিপে দেশের মানুষ এই সরকারের উপর পাঁচ বছরের জন্য আস্থা রেখেছেন। সরকার তাঁদের আস্থার মর্যাদা রাখতে বদ্ধপরিকর। রাষ্ট্রপতি যে উৎসবের কথা বলেছেন, তা গুরুত্ব দিয়েই পালন করা হবে। এটা দেশের ইতিহাসের প্রশ্ন। সম্মানের প্রশ্ন।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.