CESCকে থামালে রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদের লোক ঠকানোও বন্ধ করতে হবে । তার আর্থিক দায়তো তখন পড়বে রাজ্যের ঘাড়ে । মানবেন মমতা ? মানা সম্ভব হবে মমতার ?

লিখেছিলাম এই দেওয়ালে
“মানুষ ক্ষেপে উঠলে প্রতি তিন মাসে একবার CESC বিজ্ঞাপন দিয়ে জানায় কলকাতায় বিদ্যুতের দাম নাকি বেশ কম । লক্ষ করে দেখবেন একটা নির্দিষ্ট স্ল্যাবের কথা উল্লেখ করে বিজ্ঞাপনে । লোকে ভাবে তাই তো !”

আজ সকালে আনন্দবাজারের কলকাতা এডিসনের প্রথম পাতায় দেখলাম CESC র সেই বিজ্ঞাপন
“আমরা গর্বিত কারণ এই তালিকায় সবচেয়ে নীচে আমাদের নাম আছে । ( নীচে সেই বিজ্ঞাপনের ছবি দিলাম ) ।”
এই বিজ্ঞাপনে চোখ পড়লে যে কোন মানুষ কি ভাববেন ? সত্যি কলকাতায় বিদ্যুতের দাম সব থেকে কম, তাইতো ?

এবার আসুন বাস্তবে । আমি CESC র বিজ্ঞাপনের পাশে দুটি তথ্য আজ তুলে দিলাম । চোখ রাখুন তাতে । কি লেখা আছে সেখানে ?

সংক্ষেপে লিখি ।

দিল্লীতে ২০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুতের ইউনিট পিছু দাম ৩ টাকা । কলকাতায় CESC নিচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ ইউনিট পর্যন্ত ইউনিট পিছু ৭ টাকা ১৬ পয়সা । অর্থাৎ দিল্লী থেকে CESC এই স্তরে বেশি নিচ্ছে ইউনিট পিছু ৪ টাকা ১৬ পয়সা । ( নীচে প্রমাণ দিলাম ) ।

এরপর আসুন পরের স্ল্যাবে । দিল্লীতে ৪০০ ইউনিট পর্যন্ত প্রতি ইউনিটের দাম ৪ টাকা ৫০ পয়সা । CESC সেখানে নিচ্ছে ৮ টাকা ৯২ পয়সা । অর্থাৎ এই স্তরে ৪ টাকা ৪২ পয়সা প্রতি ইউনিটে দিল্লির থেকে বেশি নিচ্ছে CESC । ( নীচে প্রমাণ দিলাম ) ।

আরও বাকি আছে । দিল্লীতে যাঁরা ২০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ খরচ করেন তাঁদের এক পয়সাও দিতে হয় না । সরকার পুরোটাই ভর্তুকি দেয় । কেউ যদি ৪০০ ইউনিট পর্যন্ত খরচ করে তাঁকে মোট বিদ্যুৎ মূল্যের অর্ধেক দিতে হয় । বাকিটা দেয় সরকার ।

নীচে প্রমাণ দিলাম, যেখানে পরিষ্কার ভাবে কি লেখা আছে পড়ুন –
“Delhi State has announced a subsidy of Nil energy charge upto 200 units and a half from 200-400 units subject to consumption only upto 400 units.”

এবার বুঝলেন CESC কিভাবে বিজ্ঞাপন দিয়ে মানুষকে ভুল বুঝিয়ে পকেট কাটছে ? যা সত্য তার ঠিক উল্টোটা বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রচার করছে । মমতা কি জানেন না এই সত্য ? আলবাত জানেন সঞ্জীব গোয়েঙ্কার এই খেলা ? তাঁর জ্ঞাতসারেই চলছে এই খেলা । প্রশ্ন আসবে মমতা তাহলে বুঝেও চুপ কেন ?

উত্তর খুব সহজ –
এক ।। ২০০৮ সালের আলিপুর হাউসের বোঝাপড়া । সেও এক “ডেলো বৈঠক” যার কাহিনী আমি গতকাল কিছুটা লিখেছিলাম । আজও ২০২১এ সেই বোঝাপড়া অমলিন ও অব্যাহত । সঞ্জীব গোয়েঙ্কার সঙ্গে মমতার । ডিলের ডিটেইলস সাংবাদিক বন্ধুটির কাছেই শুনেছি । প্রমাণ সাপেক্ষে তাই লিখলাম না ।

দুই ।। CESCকে থামালে রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদের লোক ঠকানোও বন্ধ করতে হবে । তার আর্থিক দায়তো তখন পড়বে রাজ্যের ঘাড়ে । মানবেন মমতা ? মানা সম্ভব হবে মমতার ? কখনোই নয় ।
সেটা মানলে খেলা, মেলা, উৎসবের দান খয়রাতি কোথা থেকে আসবে ?

ফলে চলবে এই ঘাড় মটকানো আমজনতার । মমতার এবং CESC র । তাঁদের নিজ নিজ স্বার্থে । আনন্দবাজার, বর্তমান, এই সময় এবং অধিকাংশ চ্যানেলগুলোও চুপ থাকবে নিজ নিজ স্বার্থে । নবান্ন এবং CESCর বিজ্ঞাপনের টাকা ঢুকবে তাঁদের ভাঁড়ারে । কিন্তু বিরোধী দল গুলো ? কেন চুপ থাকবে তারা ? কিসের স্বার্থে ?

পারে না বি জে পি ? পারে না বামেরা লাগাতার আন্দোলন করে CESC ও কালীঘাটের এই অবৈধ আঁতাতের ইতি টানতে ?

শুরু হোক না সেই আন্দোলন আজ থেকেই । তথ্যের রসদ যা লাগে দেব এই দেওয়াল থেকেই । কোন রাজ্যে কি বিদ্যুতের দাম লিখব এই দেওয়ালে নিয়ম করে । চোখ রাখুন এখানে যাঁরা এই লড়াইয়ে সামিল হতে চান ।

CESC ও রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদের সব অনাচার নিয়ে সোচ্চার হোন । নিজের স্বার্থেই ।

সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় (৯৮৩০৪২৬০৭৮)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.