বেঁচে থাকলে সুব্রত মুখার্জি নিশ্চিত একটা তদন্ত চাইতেন । যদি মৃত্যুটা একজন শাসক দলের নেতার হত, এবং সুব্রত মুখার্জি যদি বিরোধী দলের নেতা হতেন।

বেঁচে থাকলে সুব্রত মুখার্জি নিশ্চিত একটা তদন্ত চাইতেন । যদি মৃত্যুটা একজন শাসক দলের নেতার হত, এবং সুব্রত মুখার্জি যদি বিরোধী দলের নেতা হতেন।
কেন বলছি কি প্রসঙ্গে বলছি, বলছি পরে ।

এক প্রবীণ সাংবাদিকের মুখে শোনা প্রমোদ দাশগুপ্ত মারা যাবার পর সুব্রত মুখার্জি নাকি মৃত্যুর তদন্ত চেয়েছিলেন । মৃত্যুর কারণ নিয়ে নাকি তাঁর সংশয় ছিল তাই । সেটা বাম আমল । সুব্রত মুখার্জি নামটা তখন বিরোধী কংগ্রেসের । তদন্ত হয়নি, হবেই বা কেন । কিন্তু সুব্রত মুখার্জির কিছু নিজস্ব যুক্তি ছিল, তাই চেয়েছিলেন ।

আজ তিনি নেই । তাঁর মৃত্যুর মুহূর্ত নিয়ে কিছু তথ্য সামনে এসেছে, সেটাই বলি ।

সুব্রত মুখার্জি মারা গেলেন কালীপুজোর সন্ধ্যায় । ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর সময় লেখা হল রাত ৯ টা ২২ । মৃত্যুর মুহূর্তে পাশে ছিলেন সুব্রত বাবুর স্ত্রী । সেই মুহূর্তটা বর্ণনা করেছেন সুব্রতবাবুর খুব কাছের মানুষ আইনজীবী মণিশঙ্কর চট্টোপাধ্যায় । কি বলেছেন তিনি ? বলেছেন – বাথরুম থেকে এসে দাদার বুকে যন্ত্রণা হওয়া শুরু হয় । বৌদি বলেন – মুনি ডাক্তার ডাক । আমি ডা: সরোজ মণ্ডলকে ফোন করি । রেসপন্স পাইনা । চারদিকে হন্যে হয়ে ডাকাডাকি করি । কিছু জুনিয়ররা আসেন, পাম্প শুরু করেন, একটা ঘণ্টা চলে যায়, কোন ডাক্তার ছিল না, সাড়ে সাতটা থেকে পৌনে ৮ টার মধ্যে দাদা শেষ ।

যা মণিশঙ্কর বলেছেন তার সার সংক্ষেপ দাঁড়ায় এই । এ বি পি আনন্দের ক্লিপটি এখনও নেট দুনিয়ায় আছে ।

খবর যায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে । মুখ্যমন্ত্রী পি জি তে আসেন । সাংবাদিকদের বুমের সামনে যেটা বলেন – আজ সন্ধ্যেবেলা প্রিন্সিপাল মনি আমার বাড়ির কালীপুজোয়ে গিয়েছিলেন । তাঁকে জিজ্ঞাসা করি – সুব্রতদা কেমন আছেন ? মনি বলেন ভালো আছেন । কাল ছেড়ে দেওয়া হবে ।

মনি হচ্ছেন পি জি র অধিকর্তা ডা: মনিময় বন্দ্যোপাধ্যায় । কালীপুজোর সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে গিয়েছিলেন, অন্যায় কিছু নয় । মুখ্যমন্ত্রী সেটাই উল্লেখ করেছেন । ঠিকই করেছেন ।

এখন প্রশ্ন দুটো । ১. সন্ধ্যে কখন হয় ? উত্তর শীতকালে সাধারণত ৬ টার পর । ২. কালীপুজো কখন হয় ? উত্তর অন্ধকার নামলে ।
ধরেই নেওয়া যুক্তিসঙ্গত ডা: মনিময় বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন সেই সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির অতিথি ।

এবার নীচে বর্তমানের রিপোর্টটিতে চোখ ফেলুন । কি লেখা আছে সেখানে – “তখন সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টা হবে । এই সময় সুব্রতবাবু বলেন বুকে বেশ ব্যাথা হচ্ছে ।…. খবর পেয়ে কেবিনে ততক্ষনে চলে এসেছেন অধিকর্তা ডা: মনিময় বন্দ্যোপাধ্যায় ।….. ডা: মনিময় বন্দ্যোপাধ্যায় তখন আই সি সি ইউতে বেড ও অন্য খুঁটিনাটি আয়োজনের জন্য মোবাইলে একের পর এক ফোন করে যাচ্ছেন ।”

বর্তমানের এই রিপোর্টের হেড লাইন ” পঞ্চায়েত মন্ত্রীর প্রাণ বাঁচাতে লড়াইয়ে শামিল হন পিজি ‘ র সুপারও ” ।

বর্তমানের এই রিপোর্টের সঙ্গে মিলছে সুব্রতবাবুর সঙ্গে হাসপাতালে শেষ মুহূর্তে ঘরে থাকা আইনজীবী মণিশঙ্কর চট্টোপাধ্যায়ের বয়ান ? মিলছে মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছেন তার বয়ান ? কোনোটিই মিলছে না । তাহলে ? বর্তমানের পেশ করা রিপোর্ট যদি সত্যি ধরতে হয় তাহলে মুখ্যমন্ত্রী এবং আইনজীবী মণিশঙ্কর চট্টোপাধ্যায় পুরো ভুল বলছেন সেটা ধরে নিতে হবে ? সম্ভব ?

তাহলে সত্যিটা কি ? সত্যিটা হল – খবরটা খাওয়ানো । কে খাইয়েছেন ? উত্তর আপনারা খুঁজুন । এক অধিকর্তাও কি তাহলে খবর খাওয়ান ? বিশ্বাস করিনা ।

যেটা বিশ্বাস করি সেটা হল এই এইসব বাংলা সংবাদ মাধ্যম আসলে বাজারে আমার আপনার বিশ্বাস বেচে, বেচে খায় । যা শরীর বেচা পেশার থেকেও অধম ।

চিনে রাখুন । এঁদের । আরও একবার ।।

সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় (৯৮৩০৪২৬০৭৮)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.