ভারতের ইতিহাস ও হিউম্যানিটিজ এর পাঠ্যপুস্তকে কিভাবে কমিউনিস্টরা প্রোপাগান্ডা ঢুকিয়ে প্রজন্মের পর প্রজন্মকে বিষাক্ত করে দিয়েছে?

চীন বা সোভিয়েত ইউনিয়নের দ্বারা লিখিত ইতিহাসের বইগুলি ততটা হাস্যকর নয়, যতটা এই ভারতীয় কমিউনিস্টদের লেখা বইগুলি। সেগুলো শুধু হাস্যকর নয়, অত্যন্ত নির্লজ্জ রকমের হাস্যকর ও বিরক্তিকর। বিশেষ করে সমাজ বিজ্ঞানের সাথে সম্বন্ধযুক্ত বইতেও তারা একই রকম প্রোপাগান্ডা মূলক হাস্যকর রচনাই লিখেছেন। তাদের লেখা পড়লে বোঝা যাবে তারা বিশুদ্ধ প্রোপাগান্ডা ছাড়া আর কিছুই নেই. কিন্তু সেই কাজটাও এতদিন ধরে হয়নি। তারা অত্যন্ত ধুরন্ধর, নিজেদের অজ্ঞানতা, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ধামাচাপা দেবার জন্য নিজেদের পছন্দের প্রেস ছাড়া কোথাও ছাপান না, অবামপন্থী পণ্ডিতদের দিয়ে চেকিং করাতে দেন না; সাথে অধিকাংশ সময়ে গ্রন্থসূচী পর্যন্ত এমন লেখকদের বই দেওয়া হয়, যাদের নাম হয় কেউ শোনেনি নয় তাদের বই কেউ পড়ার সৌভাগ্য অর্জন করেনি। এই চিন্তাধারার অধিকারী কমিউনিস্ট বইগুলি কেমন হবে সেটা বোঝাই যায়।

১৯১৮ থেকে ১৯৮৮ সালের মধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়নে ছাপা যতগুলি ইতিহাস, সমাজ বিজ্ঞান ও হিউম্যানিটিজ সম্বন্ধিত বই প্রকাশিত হয়েছিল সব খোদ মিখাইল গরবাচেভের আদেশে ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া হয়েছিল! এখানে বলে রাখা দরকার গরবাচেভ কিন্তু নিজেও কমিউনিস্ট ছিলেন তা সত্ত্বেও তিনি বইগুলোকে নিখাদ জঞ্জাল ছাড়া কিছুই ভাবতে পারেন নি। একই দশা হয়েছিল চীনের ক্ষেত্রেও। ভারতে যে এটা হয়নি তার কারণ অবশ্যই ভারতের গণতান্ত্রিক ভাবধারা। কিন্তু দুই দেশের ইতিহাস স্মরণে রাখলে এটাও ধরে নেওয়া যায় ভারতের ক্ষেত্রে নিশ্চিতভাবে ব্যতিক্রম হবে না। বস্তুত, কমিউনিস্ট চিন্তাধারাটাই ‘অসত্য’, ‘মিথ্যাচার’, ‘ইতিহাসের বিকৃতকরণের’ ওপর দাঁড়িয়ে আছে। ভারতের কমিউনিস্টরা এর ব্যতিক্রম হবে এমনটাই আশা করা অন্যায়।

যে কোনও সঠিক ইতিহাস গ্রন্থ রচনার ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি খেয়াল রাখতে হয়। এগুলো হল –

  • তথ্যের প্রামাণ্যতা।
  • যে তথ্য পেশ করা হচ্ছে তাতে যুক্তি ও তর্কের অবকাশ থাকবে।
  • নতুন নতুন তথ্য থাকবে, এবং তা যাচাই করার সুযোগ থাকবে।
  • শিক্ষামূলক হবে।

যে কোনও ইতিহাস গ্রন্থ কালোত্তীর্ণ হতে গেলে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি অবশ্যই থাকতে হবে।

সরকারী মদতে সৎ ইতিহাসবিদ ও পণ্ডিতদের শিক্ষা ক্ষেত্র থেকে বিতাড়ন

উপরোক্ত চার বিষয়ের কথা মাথায় রাখলেই বোঝা যাবে কমিউনিস্টদের দ্বারা রচিত বইগুলি মোটেই বিশ্বাসযোগ্য তো নয়ই – উলটে তাদের রচনায় একটি ন্যক্কারজনক রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব লক্ষ্য করা যায়। তারা নিজেরাও নতুন কোনও সত্যতা তুলে ধরার চেয়ে এমনভাবে রাজনৈতিক মতবাদ সাংবাদিক সম্মেলনে বা কোনও প্রকাশ্য মহলে প্রকাশ করেন তাতে তাদের মানসিকতা বুঝতে বিশেষ অসুবিধা হয় না। সত্যি বলতে কি, এই কাজে তারা বিশেষ রূপে পারদর্শী। তারা এই কাজে বরাবরই নিজ দল ও কংগ্রেসের রাজনৈতিক লাভের দিকটা দেখেন। ঠিক এই চিন্তাধারা থেকেই তারা সৎ ইতিহাসবিদ ও পণ্ডিতদের শৈক্ষণিক ক্ষেত্র থেকে সরাতে দুবার ভাবেন নি। কেননা ঐ ধরণের পাণ্ডিত্য তাদের ‘চিন্তাধারার’ সাথে খাপ খায় না।

তাদের চিন্তাধারার সাথে না মিললেই যেসব ইতিহাসবিদদের রচনা বাতিল করে দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে, তারা হলেন

  • আর্নল্ড টয়েনবী
  • যদুনাথ সরকার
  • রমেশচন্দ্র মজুমদার
  • উইল ডুরান্ড
  • ভিন্সেন্ট আর্থার স্মিথ

এদের লেখার কোনও উল্লেখ কোনও কমিউনিস্ট ইতিহাসবিদদের লেখায় পাওয়া যাবে না। কারণ কমিউনিস্টরা বিলক্ষণ জানেন তারা ইতিহাস লিখেছেন বিশেষ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে, যা উপরোক্ত লেখকরা করেন নি। এমনকি কমিউনিস্ট লেখকরা কোনও ওয়ার্কশপে, কোনও সেমিনার, কোনও শিক্ষামূলক কার্যক্ষেত্রে পারতপক্ষে এদের নামোচ্চারণ করে না; এদের রচনার উল্লেখের কথা বাদই দিলাম। এতেই শেষ নয় –সাথে এদের গ্রন্থ যাতে কোনও অনুসন্ধিৎসু ছাত্রছাত্রী পড়তে না পারে, সেজন্য এরা সরকারী অফিসার ও আমলাদের সাহায্য নিয়েছেন। এমন একটি সিস্টেম তারা বানিয়েছেন যাতে ভারতের কোনও বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি ইত্যাদি জায়গায় এদের লেখা কোনও বইই পাওয়া যাবে না। সন্দেহ নেই কমিউনিস্টদের এই কুকীর্তিতে কংগ্রেসের পুড়ন মদত ছিল। কারণটা পরিষ্কার, কংগ্রেস ও কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান লক্ষ্য ছিল; ভারতে ধর্মনিরপেক্ষ স্থাপনের নামে একটি ‘ইসলামিক রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠা করা। সে কাজে তারা ইন্টারনেট আসার আগে বেশ সফল হলেও এখন পারছেন না।

১৯৯৮ সালে বিজেপি শাসিত এনডিএ সরকার গঠিত হবার পর থেকে শিক্ষাক্ষেত্রে তাদের মৌরসিপাট্টা কমজোরি হতে শুরু করে। এনডিএ সরকার জাতীয় বিদ্যালয়গুলিতে এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে কমিউনিস্ট ইতিহাসবিদদের লেখা ইতিহাস ও অন্যান্য বইগুলি সরিয়ে তার পরিবর্তে উপরোক্ত ইতিহাসবিদদের লেখা বইগুলি ফিরিয়ে আনেন। সে সময়ে কমিউনিস্টরা এ নিয়ে আপত্তি করতে থাকেন।

রোমিলা থাপার : এইসব ইতিহাসবিদ কারা, যাদের আদেশে এইসব বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে? সেখানে কেন আমাদের ডাকা হয়নি?

আর এস শর্মা : তারা এব্যাপারে সম্ভবত আগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। তাহলেও বলছি এভাবে ইতিহাস পালটানো যায় না।

******************

এখন প্রশ্ন হল এই ‘ইতিহাসবিদরা’ কি স্বীকার করবেন যে, তারা কোন যুক্তিতে উপরোক্ত ছয় বিশ্ববিখ্যাত ভারততত্ত্ববিদ ও ইতিহাসবিদকে ছাঁটাই করেছিলেন? কেনই বা তাদের বই যাতে কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে না পড়ানো হয় তার জন্য ছয় দশক ধরে এত মরিয়া হয়ে উঠেছেন? তারা এতকাল ধরে যে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ হিস্টোরিক্যাল রিসার্চ প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন, সেখানে মোটা অর্থের বেতনের বিনিময়ে এতদিন ধরে কি অবদান রেখেছেন? এখানে বলে রাখা দরকার কি হিন্দু, কি মুসলিম, কি খ্রিস্টান পণ্ডিত; সকলেই মুসলিম শাসিত ভারতের সম্বন্ধে অল্পবিস্তর জানতেন, অন্তত ব্রিটিশ ভারত আমলে। কেনই বা সেই জানাটা ভারতের স্বাধীনতা পাওয়ার পর থেকে মূল্যহীন হয়ে গেল? এই কমিউনিস্ট ইতিহাসবিদরা কার বা কাদের সাথে পরামর্শ করে ইসলামিক ভারতের সব কলঙ্কিত অধ্যায় ধামাচাপা দিতে চেয়েছিল তা জানা যাবে কি? কেনই বা তারা ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ ইতিহাস লেখার নামে হিন্দু শাসকদের কালিমালিপ্ত ও মুসলিম শাসকদের গৌরবান্বিত করার কাজটা এত সিরিয়াসলি নিয়েছেন তা একটু বলবেন কি? তাদেরি বা কে বা কারা ভারতে শিক্ষা ক্ষেত্রে ‘কমিউনিস্ট শাসন’ চালু করার জন্য? এর উত্তর হচ্ছে : কেউ বলেনি। সেটা তারা ‘রাজনৈতিক স্বার্থে’ স্বেচ্ছায় করেছিলেন।

বিপান চন্দ্র সেই জন্যই সম্ভবত লিখেছেন যে, কেনই বা বিশুদ্ধ কমিউনিস্টরা বিশুদ্ধ শিক্ষক হতে পারেন না। কেনই বা প্রত্যেক কমিউনিস্ট ইতিহাসের পরম কর্তব্য হল শুধু বই লেখা নয় – সাথে ইতিহাস রচনার নামে সামাজিক বিপ্লব আনাটাও। বিপান চন্দ্র কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইণ্ডিয়াকে এ বিষয়ে অনুরোধও করেছিলেন যাতে তারা রণনীতি তৈরী করে দেন এবং সেইমত তারা (কমিউনিস্ট ইতিহাসবিদ) চলবেন। তিনি এসব লিখেছিলেন জেএনইউ এর দ্য সেন্টার ফর হিস্টোরিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি হিসাবে। জুন ১৯৭৪ সালে একটি সেমিনারের জন্য বিপান চন্দ্র একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন – ‘টোটাল রেক্টিফিকেশন’ নেম; যাতে উপরোক্ত রাজনৈতিক অনুরোধ করা হয়েছিল। তার এই স্বীকারোক্তি অনুসারে বলা চলে প্রত্যেক কমিউনিস্ট ইতিহাসবিদরা শুধু ইতিহাসবিদ নয়, সাথে পুরোপুরি রাজনৈতিক কর্মীও বটে। তাদের প্রধান পরিকল্পনা ছিল যে, ভারতের রাজনৈতিক কাঠামো পালটে দিয়ে গণতন্ত্র থেকে সর্বহারার একনায়কতন্ত্র স্থাপন করা। বিপান চন্দ্র নিজেই ‘ভারত কা স্বতন্ত্রতা সংঘর্ষ’ বইতে ভূমিকা লিখতে গিয়ে একই কথা বলেছেন। উক্ত বইটা ছিল মৃদুলা মুখার্জির লেখা।

কমিউনিস্টরা কিভাবে শিক্ষা ক্ষেত্রকে নিজেদের ঠেক বানিয়ে ফেলে, যাকে কেউ চ্যালেঞ্জ করতে পারেনা?

সারা বিশ্বে বিগত একশ বছরের ইতিহাস কেউ যদি দেখে, তাহলে বুঝবে কমিউনিস্টরা সর্বদাই ডাবল স্ট্যান্ডার্ড নিয়ে চলে। সেটাই তাদের রাজনৈতিক মানদণ্ড। তারা নিজেদের জন্য আরেক রকম নীতি নিয়ে চলে, আর অন্য মতাবলম্বীদের জন্য আরেক রকম। তারা ভেবেই নেয় যে, তাদের অধিকার আছে অন্য মতাবলম্বীদের খারিজ করে দেওয়ার, কিন্তু অন্য মতাবলম্বীদের সে অধিকার নেই। যদি বা খারিজ হয়ে যায় তখন বিভিন্ন সেমিনার, গণভোটের দাবি করে তাদের খারিজ করার পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলবে। তারা এক্ষেত্রে বিশুদ্ধ প্রোপাগান্ডা ব্যবহার করবে। ভারতে কমিউনিস্ট রাজনীতি এভাবেই প্রায় ১০০ বছর ধরে চলেছে। তারা কোনদিনই বিপক্ষের মতামতকে গুরুত্ব দেয়নি, নিজেদের মতামতকে চাপিয়ে দেওয়ার নোংরা রাজনীতি করে গেছে। তারা নিজেদের মতামত চাপানোর জন্য বয়কট, সত্যাগ্রহ, আইন অমান্য, ভাংচুর, দাঙ্গা এমনকি দেশদ্রোহমূলক স্লোগান (কাশ্মীর মাঙ্গে আজাদি) দেওয়াকে অনৈতিক মনে করে না। তাদের যত বাহাদুরি ভারতের অমুসলিম প্রধান ‘বুর্জোয়া’ দেশেই। তারা মানবাধিকারের নামে ভয়াবহ খুনি, ধর্ষক, সন্ত্রাসবাদীদের পাশে দাঁড়ায়। মজার কথা হচ্ছে, যেখানে পাকিস্তান বা বাংলাদেশের মত ইসলামিক দেশে চলে আসে; তখন তারা উপরোক্ত কিছুই করার সুযোগ পায়না। বলা ভাল করতে দেওয়া হয়না। একই কথা প্রযোজ্য কমিউনিস্টদের আপন দেশ – চীন, কিউবা বা নর্থ কোরিয়ার ক্ষেত্রেও। সেখানে সব রকমের মানবাধিকার পুরোপুরি নন ইস্যু। তাদের এই ভণ্ডামি ইন্টারনেটের যুগে ধরা পড়ছে এবং তাই প্রাসঙ্গিকতা হারাচ্ছে।

কমিউনিস্ট ইতিহাসবিদদের রচনার ক্ষেত্রেও একই রকম ডাবল স্ট্যান্ডার্ড লক্ষ করা যায়। সেখানে একটি অদ্ভুত জিনিস চোখে পড়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগুলিতে বিশেষ ভাবে রোল নাম্বার সমেত উত্তরপত্র পরীক্ষকের কাছে পাঠান হয় যাতে ঠিকভাবে মূল্যায়ন হয়। যারা কমিউনিস্ট ইতিহাসবিদদের পছন্দের ছাত্র নয়, তাদের হয় ফেল করিয়ে দেওয়া হয় নয় কম নম্বর পাইয়ে দেওয়া হয়। এবার যদি আমরা দেখি কোনও শিক্ষাগত মূল্যায়নের বই এবং প্রবন্ধ লেখকের নাম ও রোল নাম্বার অনুল্লেখিত রেখে কমিউনিস্ট ইতিহাসবিদদের কাছে পাঠাই, তবে একটি অদ্ভুত জিনিস লক্ষ্য করব।

সেক্ষেত্রে পরীক্ষক নিজের ইচ্ছামতন নাম্বার দেওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবেন। তার পক্ষে ছাত্র বা ছাত্রীটা ডানপন্থী নাকি বামপন্থী শিক্ষকের শিশয় তা অনুমান করা সম্ভব হবে না। এক্ষেত্রে তিনি শুধু নিম্নলিখিত বিষয়ের মূল্যায়ন করতে পারবেন। সেগুলি হল।

  • বিষয়বস্তু
  • প্রস্তাবনা
  • প্রস্তাবনার পক্ষে সঠিক তথ্য ও প্রমাণ পেশ করেছেন কিনা।
  • সেখানে যেসব তথ্য বাদ দেওয়া হলে কেন দেওয়া হয়েছে ইত্যাদি।
  • সিদ্ধান্ত গ্রহণযোগ্য কেন বাতিলযোগ্য মনে হচ্ছে তার স্বপক্ষে মানদণ্ড পেশ করা।
  • বিষয়বস্তু কতখানি নিরপেক্ষ?

এমনকি একজন সাধারণ মানুষও চাইলে এই পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। এইভাবে ছয় মাপকাঠি দিয়ে বিচার করলেই কমিউনিস্ট ইতিহাসবিদরা যে কতখানি সৎ সেটা দিনের আলোর ন্যায় পরিষ্কার হয়ে যাবে। উপরোক্ত ছয় মাপকাঠি দিয়ে মাপলে বোঝা যাবে তাদের লেখা বই, প্রবন্ধ, পুস্তিকা ও লেকচার আদৌ পাশ হবার মতই নয় বরং – লেনিনিস্ট প্রোপাগান্ডার ঊর্ধ্বে উঠতে সক্ষম হবেনা। তারা রচনা করে বা লেকচার দেন কেবল রাজনৈতিক কর্মী তৈরী করার জন্য, সত্য ইতিহাস উদ্ঘাটনের স্বার্থে নয়। সোজা কথায় মগজধোলাই করে একটি দলনিবেদিত ক্যাডার বানানোটাই এদের উদ্দেশ্য।

আগেই বলেছি যে, কমিউনিস্ট লেখকরা কস্মিনকালেও সত্যকারের তথ্যনিষ্ঠ ইতিহাস লেখার ব্যাপারে উৎসাহয়ী নন। তাদের লেখার একমাত্র লক্ষ্য হল – মগজধোলাই করা। সেজন্য তারা একটি চরিত্রকে নিজের মনের মাধুরি মিশিয়ে তাকে হিরো থেকে ভিলেন বানানো, এবং সেটাও সঠিক তথ্যের ওপর দাঁড় করাতে এরা সক্ষম নন। তারপর ‘ভিলেন’কে সাধারণ মানুষের মন থেকে মুছে ফেলাই এদের প্রধান লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায় নানান রকমের প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে। কিন্তু যখন প্রকৃত ইতিহাস সাধারণ লোকের সামনে ফাঁস হয়ে যায়; এরা তখন নিত্য নতুন কাল্পনিক তথ্য জোগাড় করে প্রাচীন পুঁথি বা গ্রন্থের ব্যবহৃত তথ্যের বিকৃতি ঘটিয়ে। এইভাবে অর্ধসত্যের মাধ্যমে পুরো গ্রন্থ বা প্রবন্ধ মিথ্যাচারের নামান্তর করে সাধারণ মানুষের কাছে পেশ করে। শুধু ভারত নয়, সারা বিশ্বের মানুষের কাছেই কমিউনিস্টরা এই জালসাজি করে মগজধোলাই করার চেষ্টা চালিয়েছে। এটাই তাদের একমাত্র যোগ্যতা ও দক্ষতা।

******************

আবার বলছি যে, কমিউনিস্ট ইতিহাসবিদদের প্রধান লক্ষ্য তথ্যনিষ্ঠ সত্য ইতিহাস লেখা নয়, বরং মিথ্যা ইতিহাস রচনা করে ছাত্রছাত্রীদের মনে বিশ্বাস তৈরী করে দেওয়া যে, তারাই একমাত্র ঠিক; বাকিগুলো মিথ্যা। এইভাবে মগজধোলাই করে একটা দলনিবেদিত ক্যাডার বানানো; যার নিজস্ব যুক্তিবুদ্ধি ধীরে ধীরে লোপ পেয়েছে। বস্তুত যেকোনো ব্যক্তির যুক্তিবুদ্ধি লোপ পাওয়ানোটাই কমিউনিস্ট ইতিহাসবিদদের প্রধান লক্ষ্য ও সেকাজে তারা সফল হয়েছে যতদিন না ইন্টারনেট ও সোশাল মিডিয়া এসেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.