আমরা অনেকেই প্রবাল দ্বীপ দেখেছি বা সমুদ্রে গোঁতা দিয়ে প্রবাল প্রাচীর। রঙবেরঙে মোড়া প্রবাল প্রাচীর একটি অদ্ভুত বাস্তু সংস্থান। প্রবাল পুরোপুরি সামুদ্রিক জীব, যারা সিলেনটেরাটা পর্বের প্রাণী। এদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো যে, দেহের ভেতরে ফাঁপা নলের মতো নালী থাকে। নালীর একদিকে একটি গহ্বর থাকে, এটাই এদের মুখ। ব্যস আর কোনো ছিদ্র নেই এদের দেহে। এদের শরীরে রক্তসংবহনতন্ত্র নেই। যৌন ও অযৌন উভয় পদ্ধতিতেই প্রবালের বংশবৃদ্ধি হয়ে থাকে। প্রবাল দ্বীপ বা প্রবাল প্রাচীর তৈরি হয় যূথবদ্ধ প্রবালের দ্বারা যারা সমুদ্রগর্ভে এক একটি বিশাল উপনিবেশ বানিয়ে ফেলে আর সেইগুলিই হল প্রবাল দ্ব্বেপ ও প্রাচীর। আজ থেকে প্রায় ৪৯ কোটি বছর আগে অর্ডোভিসিয়ান যুগে আবির্ভাব হয়েছিল স্বতন্ত্র প্রবালের। তারপর এদের চরম উন্নতি হয়েছিল সিলুরিয়ান-ডেভোনিয়ান যুগে। সিলুরিয়ান যুগ চলেছিল আজ থেকে ৪৫ কোটি বছর আগে থেকে ৪২ কোটি বছর আগে অবধি এবং তারপর ডেভোনিয়ান যুগ শুরু হয়ে তা শেষ হয়েছিল আজ থেকে প্রায় ৩৬ কোটি বছর আগে। এই প্রবাল উপনিবেশ বানাতে পারতো না তাই একে স্বতন্ত্র প্রবাল বলা হয়। পারমিয়ান যুগের শেষের সময়ে (প্রায় ২৫ কোটি বছর আগে) এই প্রজাতি সম্পূর্ণ ভাবে বিলুপ্ত হয়ে যায় পৃথিবী থেকে। স্বতন্ত্র প্রবালের দেহ দেখতে একটি কাপের মতো বা শিং-এর মতো হয়ে থাকে, যার একদিক একটু অবনমিত থাকে। এই উপশ্রেণীর নাম রুগোসা (Rugosa), তবে শিং এর মতো আকৃতির জন্যে একে শিং-প্রবালও বলা হয়ে থাকে। বিষ্ণুর রূপ হিসেবে যেমন শালিগ্রাম শিলা (অ্যামোনাইট-এর ফসিল) পূজিত হয় তেমনই বিষ্ণুর আরেক রূপ হিসেবে দ্বারকা শিলা পূজিত হয় যা আসলে প্রবাল। স্কন্দপুরাণের প্রভাস খণ্ডে প্রহ্লাদ দ্বারকা শিলার মাহাত্ম্য ব্যাখ্যা করেছেন। সেখানে একচক্র বিশিষ্ট দ্বারকা শিলার নাম সুদর্শন। সতন্ত্র প্রবালের নিম্ন স্থানে একটি চক্রের মতো চিহ্ন থাকে। স্বতন্ত্র হওয়ার ফলে এখানে একটি চক্রই থাকে। একচক্র বিশিষ্ট দ্বারকা শিলা স্বতন্ত্র প্রবাল ফসিল ছাড়া আর কিছুই নয়। আমার সংগ্রহের একটি স্বতন্ত্র প্রবালের ফসিলের ছবি দিলাম যা আমি পেয়েছিলাম উত্তর হিমালয় থেকে।
তথ্য সূত্র
1 পুরাজীব বিদ্যা, শুভেন্দু কুমার বক্সী
2 ভারতের শিলাস্তর ও ভূতত্বীয় ইতিহাস, তিমির রঞ্জন সর্বাধিকরী
3 Christian Barrs et al, The earliest rugose coral
4 C W Merriam, Middle Devonian Rugose coral
দীপন ভট্টাচার্য