দত্তোপান্ত থেঙ্গাদি—সক্রিয় আরএসএস কর্মী মন্ত্রী যিনি “আত্মনির্ভর ভারত” ধারনাকে কয়েক দশক আগে রূপ দিয়েছেন

নিউ দিল্লী: করোনা ভাইরাসের করলাগ্ৰাস থেকে ভারতীয় অর্থনীতিকে পুনর্জীবিত করার জন্য শ্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার আত্মনির্ভর ভারত নামক একটি “স্বদেশী” পথ মনোনীত করেছেন, কিন্তু কয়েক দশক আগেই আরএসএস নেতা স্টালওয়ার্ট দত্তোপান্ত থেঙ্গাদী এই পথের সন্ধান দিয়েছিলেন।

ভারতীয় মজদুর সংঘ, স্বদেশী জাগরণ মঞ্চ এবং ভারতীয় কিষান সংঘ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে থেঙ্গাদী একটি সংঘ প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর উপর রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের অনুপ্রেরণা ছিল। এইবছর ২৫শে অক্টোবর, আরএসএস সদর দপ্তর, নাগপুরে,বিজয়া দশমীর​ বক্তৃতায় সরসংঘচালক মোহন ভাগবত, ‘স্বদেশী’ অর্থনৈতিক দর্শনের উপর বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে থেঙ্গাদির কথা উদ্ধৃত করে বলেন যে— “স্বর্গীয় শ্রী দত্তোপান্ত ঠেঙ্গাদিজী স্বদেশী পণ্য ও পরিষেবাকে ছড়িয়ে দেওয়ার পিছনে এবং জাতীয় স্বনির্ভরতা, সার্বভৌমত্ব ও সমতা অর্জনের মাধ্যমে, আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন এবং তার পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন”।
থেঙ্গাদি এটাও জানিয়েছিলেন যে— “ভবিষ্যতে আর্থিক স্বাধীনতা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অর্জনের জন্য আমরা বিদেশী বিনিয়োগকারীদের​ উন্মুক্ত ও উন্নত প্রযুক্তি সরবরাহের পাশাপাশি সংস্থাগুলোকে শিথিল করে দেব যদি তারা আমাদের শর্তাদি​ এবং পারস্পরিক সহযোগিতার​ প্রশ্নে সম্মত থাকে এবং এই জাতীয় সিদ্ধান্ত পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতেই​ নেওয়া হবে”।
থেঙ্গাদির জন্মশতবার্ষিকীতে মোহন ভাগবত, “দত্তোপান্ত থেঙ্গাদী:দ‍্য অ‍্যাক্টিভিস্ট পার্লামেন্টেরিয়ান” শীর্ষক​ একটি বই প্রকাশ করবেন। এই সক্রিয় সাংসদ বইটির মধ্যে আরএসএস নেতার জীবনের অজানা দিকগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন যিনি কিনা ভারতীয় জন সংঘকে ১৯৭৪ এবং ১৯৭৬ সালের মধ্যে দুটি মেয়াদে রাজ‍্যসভায় প্রতিনিধিত্ব করেন। বইটির সম্পাদনার​ দায়িত্বে​ ছিলেন নবীন কালিঙ্গন এবং অনির্বাণ গাঙ্গুলী। সাংসদ থাকাকালীন থেঙ্গাদির ভাষন, কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বর্ণনা রয়েছে এই বইয়ের মধ্যে। অর্থনৈতিক ও আর্থিক সংস্থান থেকে শুরু করে কৃষিকাজ, গোহত্যা সববিষয়েই তার অবস্থান ছিল উল্লেখযোগ্য।

থেঙ্গাদী ও বিশ্বায়ন

বইটির মুখবন্ধে, স্বদেশী জাগরণ মঞ্চের আয়োজক এস.গুরুমুখী,আরবিআই-এর স্বতন্ত্র ডিরেক্টর, উল্লেখ করেছেন যে— বিশ্ব এখন বিশ্বায়নের ধারণা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, ঠিক যেমন থেঙ্গাদি পূর্বাভাস দিয়েছিলেন।
গুরুমুখী জানিয়েছেন যে—বিশ্বায়ন যখন নব্বই দশকের গোড়ার দিকে ভারতকে চ‍্যালেঞ্জ জানিয়েছিল এবং প্রত‍্যেকে অসহায়ভাবে এর বিরোধিতা করেছিল বা অন্ধভাবে তাকে স্বাগত জানাছিল তখন তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনের আত্মিক স্বদেশী ধারণাটিকে স্মরণ করেছিলেন, দেশীয় দৃষ্টান্ত স্থাপনের​ মাধ্যমে পুরো ব‍্যাপারটি পরিচালনা করেছিলেন। মাত্র ২৫বছরেরও কম বয়সে থেঙ্গাদির পূর্বাভাস অনুসারে বিশ্বায়ন শেষ হয়েছে। গুরুমুখী ১৯৮০-৯০সাল পর্যন্ত থেঙ্গাদির সহকর্মী ছিলেন। গুরুমুখী আরও জানান যে “তিনি WTO’র বিরোধিতা করেন। এখন মার্কিন/পশ্চিম এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাচ্ছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক যে,১৯৯০সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট যিনি বিশ্বায়নের প্রধান ছিলেন এবং থেঙ্গাদির মতো বিশ্বাস করতেন যে বিশ্বায়ন নয় দেশপ্রেম ই হল ভবিষ্যত, তিনি আর বেঁচে নেই।

আম্বেদকরের সাথে থেঙ্গাদির সম্পর্ক

থেঙ্গাদি এবং আম্বেদকরের সম্পর্ক এতোটাই বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল যে তিনি আম্বেদকরের সাথে জোর খাটাতে পারতেন। তিনি ছিলেন আম্বেদকরের পূর্ণকালীন সহায়ক। থেঙ্গাদি লিখেছেন— “আমি বাবাসাহেবের উত্তেজনা ও সমস‍্যার প্রতক্ষ্যদর্শী ছিলাম”।
গুরুমুখীর মতে, থেঙ্গাদি স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন যে আম্বেদকর হিন্দু সাধু ও ধর্মীয় প্রধানদের সামনে প্রকাশ্যে ঘোষণা করতে চেয়েছিলেন যে হিন্দুদের​ ধর্মীয় লিপির মধ্যে অস্পৃশ্যতার​ কোনো অনুমোদন নেই।
“এদিকে আরএসএসের প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ হয়নি। কিন্তু বাবা সাহেব থেঙ্গাদীকে বলেছিলেন যে তাঁর সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে। ১৯৫৪সালে তাঁর স্বাস্থ্যের দ্রুত অবনতি ঘটতে থাকে। বাবা সাহেব থেঙ্গাদীকে বলেছিলেন যে অস্পৃশ্যতা​ অপসারণের আরএসএসের উপর বিশ্বাস আছে। তবে এটি খুব ধীর প্রক্রিয়া।আমি অপেক্ষা করতে পারবো না আর আমি সমস্যার শেষ দেখা পর্যন্ত বাঁচবো না” গুরুমুখী লেখেন।
থেঙ্গাদি এই কথাটাও স্মরণ করেছিলেন যে—বাবাসাহেব বৌদ্ধধর্মকে কিভাবে গ্ৰহন করেছিলেন। “আমি যদি এই অসহায় জনগোষ্ঠীদের পথ না দেখাতাম তবে খ্রীষ্টান গির্জা ও কমিউনিস্টরা​ তাদের শিকার বানিয়ে ফেলত। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের অনুপ্রেরণায়​ বিশ্ব হিন্দু পরিষদ উদুপীতে ১৯৫৪সালে এক সম্মেলনের​ আয়োজন করেন এবং হিন্দু ধর্মীয় নেতাদের একীভূত বানাতে পেরেছিল” গুরুমুখী যোগ করেন।

জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলি

থেঙ্গাদির জন্ম ১৯২০সালের ১০ই নভেম্বর মহারাষ্ট্রের ওয়ারধা জেলার আরভি গ্ৰামে। তিনি মরিস কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি এবং নাগপুর কলেজ থেকে এলএলবি শেষ করেন। ১৯৪০সালে যখন এম.এস.গোলওয়ার্কর দ্বিতীয় সংঘচালক হয়েছিলেন তখন তিনি যুবকদের রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের পুর্ন সময়ের জন্য সংগঠনের সম্প্রসারণ করার দায়িত্ব গ্ৰহনের জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন। এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে থেঙ্গাদি ১৯৪২খ্রীষ্টাব্দে আরএসএস প্রচারক হন এবং ২০০৪সালের ১৪ই অক্টোবর মৃত‍্যূবরনের আগে পর্যন্ত সেই ভূমিকা পালন করেছিলেন। ১৯৫২-১৯৫৩ সালে মধ‍্যপ্রদেশ এর ১৯৫৬-৫৭ তে দক্ষিণ ভারতের জন্য ভারতীয় জন পার্টির পূর্বসূরি ছিলেন এবং জনসংঘের দক্ষ সম্পাদক হিসাবেও তাকে অনেকে স্মরণ করেন।

অখিল বঙ্গ ছাত্র পরিষদ,জনসংঘ, অখিল ভারতীয় গ্ৰাহক পঞ্চায়েত ইত‍্যাদির মতো সংঘ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে সংঘ গঠনের সিদ্ধান্ত নেন থেঙ্গাদী। তিনি অনেকগুলো বই লিখেছেন,যার মধ্যে ‘স্বদেশী’ অর্থনীতির নীল নকশা হিসাবে পরিগণিত হয়।তিনি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের জন্য ২টি বই লিখেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.