বানপ্রস্থের বয়সে বানপ্রস্থই স্বাভাবিক। আদবানি-যোশীকে মনোনয়ন না দিয়ে বিজেপি ভুলটা করল কী ?

৯১ বছর বয়সী লালকৃষ্ণ আদবানিকে টিকিট না দিয়ে খুব ভাল কাজ করেছে বিজেপি। এক‌ই কথা মুরোলী মনোহর যোশীর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। বৈদিক জীবনদর্শনে চতুরাশ্রম নামে যে প্রথা ছিল সেই অনুযায়ী আদবানি ও যোশীর এখন সন্ন্যাসপর্ব পেরিয়ে বানপ্রস্থে যাওয়ারই উত্তম সময়।আদবানিজী নিঃসন্দেহে বিশালমাপের নেতা। বিজেপির অন্যতম প্রাণপুরুষ। তাঁর প্রধানমন্ত্রী হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু মহাকাল সবার ললাটে সবকিছু লিখে রাখে না।

বাজপেয়ী-আদবানির হাত ধরেই বিজেপির জন্ম,উত্থান এবং সংসদে মাত্র তিন আসন থেকে কেন্দ্রে ক্ষমতালাভ। সেই যুগটাকে বলা হয় বিজেপির বাজপেয়ী-আদবানি যুগ। জাতীয় রাজনীতিতে লালকৃষ্ণ আদবানি অটলবিহারী বাজপেয়ীর মতো মহীরুহের আড়ালে কিছুটা ঢাকা পড়ে গিয়েছিলেন বললে অত্যুক্তি হয় না । তাই বাজপেয়ীজী রাজনীতিতে সক্রিয় থাকতে আদবানির প্রধানমন্ত্রী হওয়া হয় নি। তবে ২০০৪ ও ২০০৯এ বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ লোকসভা নির্বাচনে জিততে পারলে নিঃসন্দেহে লালকৃষ্ণ আদবানিই দেশের প্রধানমন্ত্রী হতেন। কিন্তু পরপর দু দফায় এনডিএ বিজয়ী হয় নি।

২০১৪র লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির হাল ধরেন নরেন্দ্র মোদী।সেনাপতি অমিত শাহ। নরেন্দ্র মোদীর হাতে দলের নেতৃত্ব তুলে দেওয়ার ব্যাপারে লালকৃষ্ণ আদবানির আপত্তি ছিল বলে জানা যায়। মোদীকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ করে যুদ্ধে নেমে বিজেপি যে সাফল্য পায় তাকে আশাতীত বললেও ভুল বলা হবে। একথা বিজেপির কট্টর বিরোধীও স্বীকার করেন মোদী-শাহ যুগেই বিজেপি হিন্দিবলয়ের দল থেকে সর্বভারতীয় রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। যে জায়গাটা আগে ছিল কংগ্রেসের।

৯০ পেরুনো কোনও লোককে নির্বাচিত করা মানেই উপনির্বাচনের আগাম ব্যবস্থা করে রাখা (অপরাধ ক্ষমা করবেন, তিনি দীর্ঘ সুস্থ জীবন লাভ করুন)। যারা বলছে লালকৃষ্ণ আদবানির মনে এখনও এম পি বা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বাসনা আছে, তারা মিথ্যাচার করে রাজনীতি করতে চাইছে মাত্র। তিনি অত্যন্ত বিচক্ষণ পুরুষ।কিন্তু তার ৯০ বছর বয়সেও প্রধানমন্ত্রী হ‌ওয়ার বাসনা নেই, কারণ তিনি বিচক্ষণ মানুষ, যযাতির সিনড্রোমে আক্রান্ত হতে চাইবেন না সে স্বাভাবিক। শুধু আদবানিই নয় মুরলীমনোহর যোশীও নিঃসন্দেহে বিরাট মাপের নেতা । কিন্তু প্রকৃতির অমোঘ বিধানের বাইরে কেউ নয়। মহাভারত পড়লে আমরা কী দেখি ?বাসুদেব শ্রীকৃষ্ণ। যাকে বলা হয় নরের শরীরে নারায়ণ। তাঁকে পর্যন্ত শেষ বয়সে শক্তিহীন হতে হয়েছিল প্রকৃতির নিয়ম মেনে। ৭৫এর পর কাউকে ভোটে দাঁড়াতে দেওয়াই উচিত নয়। ৮০বছরের পর একটা মানুষ নিজের বাকি কটা দিন সুস্থভাবে নিজের পরিবারের সঙ্গে কাটানের কথা ভাববে না জনগণের কথা ভাববে ?

শেষে একথা অবিসংবাদিত ভাবে প্রমাণিত সত্য, লালকৃষ্ণ আদবানি, অটল বিহারী বাজপেয়ী ও মুরলী মনোহর যোশীর অবদানের জন্যই নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহের নেতৃত্বাধীন বিজেপি ভারতের প্রতি কোণে কোণে পৌঁছে গেছে, একথা যেকোনো বিরোধীই স্বাীকার করতে বাধ্য, তারা যতই বিজেপি বা তাদের মতাদর্শকে ঘৃণা করুক না।

উত্তম কুমার দেব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.