৭ বছর পেরিয়ে গেলেও যশোরে হিন্দুদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া অপরাধীদের বিচার শুরু হয়নি

কুমিল্লা থেকে শুরু হয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়া হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরাট সংখ্যক মানুষ। সেই ঘটনার বিচার হবে, দোষীদের শাস্তি হবে বলে বারবার দাবি করছেন আওয়ামী লীগের নেত্রী তথা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু বাস্তব কি বলছে? আদপে কি বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপরে অত্যাচার করা মৌলবাদীদের শাস্তি হয়? নাকি বিশ্বের মানুষের চোখে ধুলো দেওয়ার জন্যই এমন মিথ্যে বিবৃতি?

উদাহরণ হিসেবে যশোরের অভয়নগরের ঘটনা একটু বিশ্লেষণ করা যাক। ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি যশোর জেলার অভয়নগরের মালোপাড়ায় হামলা চালায় একদল উন্মত্ত মুসলিম মৌলবাদী। তাঁরা ওই গ্রামের ১২টি বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয় এবং ১৩০টি বাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। এছাড়াও বহু বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই ঘটনায় পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে 2টি মামলা দায়ের করে। দুটি মামলায় আশেপাশের গ্রামের ৫০০ জন বাসিন্দার নাম অভিযুক্ত হিসেবে উল্লেখ করে পুলিশ।
তারপরের ঘটনা চমকপ্রদ এবং হাস্যকরও বটে। মামলা চলতে থাকে। ২০১৪ সালের ২১শে ডিসেম্বর তারিখে আদালতে পুলিশ ১১৬ জনের নামে চার্জশিট জমা দেয়। পরে পুলিশের আপত্তি না থাকায় ২৯ জন বাদে সবাই জামিন পেয়ে যান। পরে সেই মামলা নিয়ে যাওয়া হয় যশোরের স্পেশাল ট্রাইব্যুনালে।

তারপর পেরিয়ে গিয়েছে ৭ বছর। এখনও মামলার সাক্ষীদের ডাকা হয়নি। শুরু হয়নি বিচার পর্ব। অভিযুক্তদের সবাই জামিন নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বহাল তবিয়তে। ফলে আদৌ তাঁরা সুবিচার পাবেন কিনা জানেন না স্থানীয় হিন্দু সংখ্যালঘুরা।

হামলার দগদগে ঘা বুকে নিয়ে গ্রামের হিন্দুদের দিন কাটছে আতঙ্কে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, সবাই ভাবে আমরা আওয়ামী লীগকে ভোট দিই। তাই বিএনপি আমাদের শত্রু মনে করে। আবার আওয়ামী লীগ মনে করে যে যদি আমাদের ভোট না দেয়, তাই আতঙ্ক সৃষ্টি করার কাজ চালিয়ে যায়। তবে হিন্দু সংখ্যালঘুদের হামলায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কেউই কম যায়না, বলছেন তাঁরা। এমনকি তাদের এও অভিযোগ, আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে যোগসাজসে হামলায় জড়িতরা সকলেই জামিনে মুক্ত। ফলে সুবিচার পাওয়ার আশা আর করেন না আক্রান্ত হিন্দুরা।

আর তাই তাই নতুন করে শুরু হয়েছে সন্দেহ। শেখ হাসিনা যতই মৌলিবাদী ও সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে মুখ খুলুন না কেন, দোষীরা শাস্তি পাবেন কিনা, তা নিয়েই সন্দেহ দানা বেঁধেছে বাংলাদেশেও সংখ্যালঘুদের মনে।

অমিত মালী

সংহতি সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.