বক্সারের কুখ্যাত নকশাল প্রভাবিত এলাকাতে নিযুক্ত একজন সি আর পি এফ কমান্ডার একের পর এক নকশাল অপারেশান পরিচালনা করে চলেছে এবং প্রত্যেকটিতে সফল হয়েছে। এই যুব কমান্ডার আজ সি আর পি এফ-এর গর্ব। দেশের প্রতি সমর্পিত এই কমান্ডার নিজ কার্যক্ষেত্র হিসাবে বক্সারকেই বেছে নিয়েছিলেন। নিজ পছন্দের কার্যক্ষেত্রে নকশালদের সমূলে বিনষ্ট করার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের বিশেষ করে মহিলাদের কল্যাণার্থে সমর্পিত কোবরা-২০৪ ব্যাটালিয়ানের এই দুঃসাহসী কমান্ডার হলেন একজন মহিলা, নাম— ঊষা কিরণ।
ঊষা কিরণ ছত্তিশগড়ের রাজধানী রায়পুর থেকে প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার দূরে বস্তারের দরভা ডিভিশনে অবস্থিত সিআরপিএফ ক্যাম্পে নিযুক্ত আছেন। এই নিযুক্তি তিনি স্বেচ্ছায় নিয়েছেন। ঘন জঙ্গল, দুর্গম পথ এবং পাহাড়ে ঘেরা বস্তার সংভাগ-এর দরভা হলো সেই জায়গা, যেখানে ২০১২ সালে কংগ্রেসের বড়ো বড়ো নেতাদের নকশালরা হত্যা করেছিল। এই এলাকায় কোনো নারীর পক্ষে হাতে বন্দুক নিয়ে সম্পূর্ণ ব্যাটেলিয়ানকে পরিচালনা করা সামান্য কথা নয়। বস্তারে নিয়োজিত কোবরা ২০৪ ব্যাটেলিয়ান এক বছরের মধ্যে পামেড়, কোট্টাগুড়া এবং বাসাগুড়াতে নকশালদের সঙ্গে সামনা-সামনি ভয়ংকর মোকাবিলা করে। এতে নকশালদের অনেক ক্ষয়-ক্ষতি হয়। পামেড় -এর রামাপল্লীতে নকশালদের ক্যাম্প ধ্বংস করে অনেক অস্ত্র শস্ত্র বাজেয়াপ্ত করে এই ব্যাটেলিয়ান।
সিআরপিএফ কমান্ডার উষা কিরণ বস্তারের নকশালদের কাছে ভয়ংকররূপে আত্মপ্রকাশ করেছেন, সব থেকে বেশি নকশাল প্রভাবিত সুকমা জেলায় নিযুক্ত কোবরা-২০৪ ব্যাটেলিয়ানের এই কমান্ডারের সাহস ও বীর্য প্রশংসীয়। নকশালদের বিরুদ্ধে তিনি সংহাররূপিণী হয়ে বারংবার আবির্ভূত হয়েছেন এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে সফল হয়ে চলেছেন। চতুর, সাহসী এবং দেশের প্রতি সমর্পিত এই যুবামাতৃশক্তি আজ পর্যন্ত প্রতিটি অপারেশনে সফল।
ঊষা কিরণকে ‘ভোগ’ ম্যাগাজিনের পক্ষ থেকে ইয়ং অ্যাচিভার অব দ্য ইয়ার (২০১৮) হিসাবে পুরস্কৃত করা হয়েছে। এই পুরস্কার দেশের জওয়ানদের মনোবল বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বস্তারের বনবাসীদের জীবনে আসা সুখময় পরিবর্তনকে সম্মান জানিয়েছে। এই পুরস্কার বীরাঙ্গনা ঊষা কিরণ দেশের ওইসব প্রহরীদের প্রতি সমর্পণ করেছেন যাঁরা ভারতের শান্তি বজায় রাখার জন্য দেশসেবায় আত্মসমর্পণ করেছেন। ঊষার এই মনোভাবকে সম্মান জানিয়েছে সিআরপিএফ (সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স)। এডিজি কুলদীপ সিংহের মতে ভালো কাজের জন্য এই ধরনের পুরস্কার প্রাপ্তি সম্পূর্ণ ফোর্সের মনোবল বাড়িয়ে দেয়। তিনি জানিয়েছেন, তারা নকশাল প্রভাবিত জঙ্গলে নকশালদের সঙ্গে ক্রমাগত লড়াই করে চলেছেন এবং স্থানীয় অধিবাসীদের উন্নতিকল্পেও কাজ করছেন। এই ক্ষেত্রে তাদের জওয়ানদের কাজ যখন পরিচিতি লাভ করে পুরস্কৃত হয়, তখন তারা আরও উৎসাহ নিয়ে দেশসেবা করেন।
গুরুগ্রাম, হরিয়ানা নিবাসী ঊষাকিরণ সিআরপিএফ -এ অ্যাসিস্ট্যান্ট কমান্ডেন্ট পদে নির্বাচিত হবার পরে বস্তারে কাজ করাকেই গুরুত্ব দেন। আন্তঃরাষ্ট্রীয় স্তরে খ্যাতিপ্রাপ্তা ঊষা এক বছরের মধ্যে প্রায় একডজন নকশাল অপারেশন পরিচালনা করেছেন। এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে সফল হয়েছেন। ঊষা ট্রিপল জাম্পে স্বর্ণ পদক পাওয়া একজন অ্যাথলিট। তিনি জানিয়েছেন যে, তার পরিবার তিন পুরুষ ধরে দেশ সেবার মতো মহান কাজে জুড়ে আছেন। তার দাদু এবং বাবা ছিলেন সিআরপিএফ-এ। বর্তমানে ঊষার স্বামী ঈবী কিরণ সিআরপিএফ-এর চিকিৎসক এবং তিনিও বক্সারে নিযুক্ত।
ঊষা কিরণের কাহিনি অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, এইরকম একজন দেশের প্রতি সমর্পিত ব্যক্তিত্বের জন্য আজ দেশবাসী গর্বিত। একটু পেছন ফিরে তাকালে আমরা দেখব, ঊষার পরিবারের ভূমিকা— দাদু, বাবার পরে ঊষা। এখানে নেই কোনো দ্বিধা-দ্বন্দ্ব; নেই নারী-পুরুষের বিভেদ। অযৌক্তিক তুলনা নেই কোথাও। সেজন্যই আমরা আজ নতুন যুগের ঊষা কিরণকে পেয়েছি। আমরা গর্বিত তার জন্য। শুধু কি এটুকুই? আমাদের পরিবারে কি আমরা আরও ঊষাকে সুযোগ করে দিতে পারি না? একজন ঊষা নিজেকে সার্থক প্রমাণ করে আমাদের মধ্যে যে উদ্দীপনা জাগিয়ে দিয়েছে, তাই দিয়ে আসুন আমরা আগামীদিনের আরও অনেক ঊষা কিরণের পথ প্রশস্ত করে নিজেদের ধন্য করি।
সুতপা বসাক ভড়