বাংলা চলচ্চিত্র জগতের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র-ধীরেন্দ্রনাথ গাঙ্গুলী

ধীরেন্দ্রনাথ গাঙ্গুলী (২৬ মার্চ ১৮৯৩—১৮ নভেম্বর ১৯৭৮), (ধীরেন গাঙ্গুলী বা ডি জি নামেও পরিচিত) ছিলেন দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার এবং পদ্মভূষণ সম্মানপ্রাপ্ত এক চলচ্চিত্র প্রযোজক, নির্দেশক, অভিনেতা আর সর্বোপরি বাংলা চলচ্চিত্র জগতের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তিনি একাধিক চলচ্চিত্র নির্মাণকারী সংস্থা স্থাপন করেছিলেন, যথা ‘ইন্দো ব্রিটিশ ফিল্ম কোম্পানী’, ‘ব্রিটিশ ডমিনিয়ন ফিল্মস’, ‘লোটাস ফিল্ম কোম্পানী’ ইত্যাদি। পরবর্তীকালে তিনি নিউ থিয়েটার্সে যোগদান করেছিলেন। তিনি হাস্যরসাত্মক অনেক ছবির প্রযোজনা করেছিলেন। তিনি জন্মগ্রহণ করেন কলকাতা শহরে আর শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন এই শহরেই।

ডি জি শান্তিনিকেতনের ছাত্র ছিলেন। তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এক দুঃসম্পর্কের আত্মীয়াকে বিবাহ করেন। তিনি হায়দ্রাবাদের ‘স্টেট আর্ট স্কুল’-এর প্রধানশিক্ষক ছিলেন। মেক-আপ-এর কাজে তার দক্ষতা ছিল প্রসিদ্ধ, যার প্রমাণ পাওয়া যায় তার লেখা বই ভাবকী অভিব্যক্তি-তেও (১৯১৫)। এ বিষয়ে ব্রিটিশ ভারতে এবং পরে স্বাধীন ভারতে গোয়েন্দা সংস্থা সি আই ডি’র অফিসারদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন।

ডি জি’র ফোটোগ্রাফির বই তাকে জামশেদজি ফ্রেমজি ম্যাডানের সান্নিধ্যে নিয়ে আসে; ম্যাডান এরপর ডি জ়ি’র তৈরি চলচ্চিত্র প্রযোজনা করতে রাজি হন। ডি জি আর ম্যাডান থিয়েটার্সের ম্যানেজার নীতীশ লাহিড়ী একসাথে ১৯১৮ সালে ইন্দো ব্রিটিশ ফিল্ম কোম্পানী শুরু করেন, যেটা ছিল বাঙ্গালী মালিকানার প্রথম ফিল্ম প্রোডাক্শন কোম্পানী। ১৯২১ সালে এই কোম্পানীর তৈরি প্রথম ছবি বিলাতফেরত (The England Returned) মুক্তি পায়। নীতীশ লাহিড়ীর পরিচালনায় নির্মিত এই হাস্যরসাত্মক নির্বাক ছবি বাণিজ্যিক সাফল্য অর্জন করে। ১৯২২ সালে এঁদের আরও দুটি ছবি মুক্তি পায়—যশোদানন্দন আর সাধু অউর শয়তান।

ডি জি লোটাস ফিল্ম কোম্পানী স্থাপন করেছিলেন হায়দ্রাবাদ শহরে। সেখানে নিজামের সহযোগিতায় একটি ফিল্ম স্টুডিও আর দুটি সিনেমা হাউসও স্থাপন করেন। ১৯২৪ সালে, বম্বে শহরে তৈরি রাজিয়া বেগম ছবির পরিবেশকদের মধ্যে তিনিও ছিলেন। এ ছবিতে এক মুসলিম রাজকুমারী আর এক হিন্দুর যুবকের প্রেমের গল্প ছিল। নিজাম এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ডি জি কে হায়দ্রাবাদ ছাড়ার আদেশ দেন। কলকাতায় ফিরে এসে ১৯২৯ সালে ডি জি ব্রিটিশ ডমিনিয়ন ফিল্মস নামক আর একটি ফিল্ম প্রোডাক্শন কোম্পানী স্থাপন করেন। অভিনেতা প্রমথেশ বড়ুয়া এই উদ্যোগে সামিল হন, এমনকি এই সংস্থার বানানো একটি ছবিতে অভিনয়ও করেন। সবাক চলচ্চিত্র আর নতুন শব্দগ্রহণ প্রযুক্তির আসার সময় এ কোম্পানীরও পতন হয়।
ডি জি এরপর প্রমথেশ বড়ুয়ার বড়ুয়া পিক্চার্স কোম্পানীতে যোগদান করেন। তবে অল্পদিনের মধ্যে দুজনেই বি এন সরকারের কোম্পানী নিউ থিয়েটার্সে যোগ দেন। ডি জি ১৯৭৪ সালে ভারত সরকার প্রদত্ত পদ্মভূষণে সম্মানিত হন। তাকে ১৯৭৫ সালে দেওয়া হয় ভারতে চলচ্চিত্র বিষয়ে দেওয়া সর্বোচ্চ সম্মান দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার।

১৯৭৮ সালের ১৮ নভেম্বর ডি জি পরলোকগমন করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.