Bypoll: ভোটের দাবির মধ্যেই চিঠি দিয়ে রাজ্যকে কড়া হাতে করোনা মোকাবিলার নির্দেশ দিল কেন্দ্র

কোভিড সংক্রমণের হার কমতে থাকার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন রাজ্য সরকার নিয়ন্ত্রণ বিধি শিথিল করছে। ব্যতিক্রম নয় পশ্চিমবঙ্গও। বস্তুত, বুধবারেও বিধিনিষেধে আরও এক দফা ছাড় দিয়েছে নবান্ন। কিন্তু ঘটনাচক্রে এ দিনই অন্যান্য রাজ্যের মুখ্যসচিবদের পাশাপাশি এ রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীকে চিঠি দিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় ভল্লা জানিয়েছেন, কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ এখনও চলে যায়নি। অথচ বিভিন্ন প্রান্তে কোভিড বিধি না-মানার তথ্য পাচ্ছে কেন্দ্র। তাই কেন্দ্রের পরামর্শ, কোভিড বিধি রূপায়ণের প্রশ্নে জেলা-সহ সংশ্লিষ্ট সব প্রশাসনিক কর্তাদের দায়বদ্ধ করুক রাজ্য সরকার।

বাংলার বিভিন্ন বিধানসভা কেন্দ্রের বকেয়া উপনির্বাচনের দাবির মধ্যে দিল্লির এ চিঠি নিছক অতিমারিজনিত উদ্বেগ থেকে সতর্কবার্তা, নাকি এতে রাজনীতির কোনও চোরকাঁটা আছে, তা নিয়ে বিভিন্ন শিবিরে জল্পনা শুরু হয়েছে। রাজ্য প্রশাসন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এই চিঠিতে কিছুটা বিস্মিত। তাদের দাবি, রাজ্যে কোভিড বিধি যথাযথ ভাবে রূপায়ণ করা হচ্ছে বলেই দৈনিক সংক্রমণ কমছে। গত সাত দিনের মধ্যে সংক্রমণ সামান্য বেড়েছে মাত্র এক দিন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, বকেয়া উপনির্বাচনের কথা ধরলে এই চিঠির ভিন্ন গুরুত্ব রয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, নিয়ম মানলে নভেম্বরের মধ্যে সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন করার কথা। রাজ্যে নিম্নমুখী সংক্রমণের যুক্তিতে উপনির্বাচনের দাবিতে সরব হয়েছে শাসক দল তৃণমূলও। এই আবহে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের চিঠিটি বিশেষ তাৎপর্য বহন করছে। উপনির্বাচনের দাবি জানাতে আজ, বৃহস্পতিবারেই দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের কাছে যাবে তৃণমূলের প্রতিনিধিদল।

রাজ্যের দাবি, সংক্রমণ আগের থেকে অনেক নিয়ন্ত্রণে আসায় তৃতীয় ঢেউ আসার আগেই উপনির্বাচন সেরে ফেলা সম্ভব। দরকারে প্রচারের সময় কমিয়ে সেই কাজ সেরে ফেলুক কমিশন। কারণ, নভেম্বরের মধ্যে বকেয়া উপনির্বাচন না-করলে সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরির আশঙ্কা থেকে যায়। এই বিষয়ে কিছু দিন আগে কমিশনকে চিঠিও দিয়েছে রাজ্য। সাতটির মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভবানীপুর কেন্দ্রের উপনির্বাচনও বাকি। সেই নির্বাচনে জিতলে তিনি বিধানসভার সদস্যা হবেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত উপনির্বাচন নিয়ে উচ্চবাচ্য করেনি কমিশন। তাই কমিশনের বর্তমান ‘অবস্থান’-এর সঙ্গে কেন্দ্রের এই চিঠির কোনও যোগসূত্র রয়েছে কি না, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকে।

বুধবার রাজ্য সরকার ফের নির্দেশিকা দিয়ে জানিয়েছে, সার্বিক নিয়ন্ত্রণ বিধি বলবৎ থাকবে ৩০ জুলাই পর্যন্ত। ঘটনাচক্রে, এ দিনই রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের অভিযোগ, রাজ্যে অ্যাক্টিভ কোভিড রোগীর সংখ্যার সঙ্গে হাসপাতালের কোভিড শয্যায় ভর্তি রোগীর সংখ্যায় মিলছে না। অথচ দু’টি তথ্যই দিচ্ছে রাজ্য। ‘‘তার মানে রাজ্য সরকারের দেওয়া হিসাবে জল মেশানো আছে,’’ মন্তব্য করেছেন শমীকবাবু।

তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘দিল্লির ডেলি প্যাসেঞ্জার নেতারা মুখ দেখাতে পারছেন না। অক্সিজেন, রেমডিসিভিয়ার আর টিকার জোগানে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে কুৎসায় নেমেছেন। সর্বৈব মিথ্যা অভিযোগ করছেন।’’

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব লিখেছেন, বঙ্গে গণপরিবহণ, শৈলশহর, বাজার এলাকায় কোভিড বিধি চূড়ান্ত ভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে। সুরক্ষা বিধি যথাযথ ভাবে বলবৎ করতে প্রশাসনিক কর্তাদের দায়বদ্ধ করা উচিত রাজ্যের। যেখানেই বেশি জনসমাগম হবে, সেখানে বিধি যথাযথ ভাবে রূপায়ণ করতে বাধ্য থাকবেন তাঁরা। কারণ, টিকাকরণ চললেও আত্মতুষ্টির জায়গা নেই। আগের মতোই গুরুত্ব দিয়ে কোভিড পরীক্ষা, রোগীর সংস্পর্শে থাকা ব্যক্তিদের চিহ্নিতকরণ, টিকাদান চালাতে হবে। যেখানে নিয়ন্ত্রণ শিথিল করা হয়েছে, বিধি না-মানলে সেখানে ফের নিয়ন্ত্রণ আরোপ ও আইনি পদক্ষেপের পক্ষে সওয়াল করেছেন ভল্লা। তাঁর পরামর্শ, অত্যন্ত সাবধানে পরিস্থিতি বিবেচনা করে নিয়ন্ত্রণ শিথিলের সিদ্ধান্ত নিক রাজ্যগুলি।

রাজ্য প্রশাসনের অন্দরের বক্তব্য, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে জেলা এবং স্থানীয় স্তরে কন্টেনমেন্ট বা মাইক্রো-কন্টেনমেন্ট নীতি চালু রয়েছে। বিধি পালন নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশকে কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট সময় অন্তর পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়। সেই কারণেই ২৮ জুন থেকে উল্লেখযোগ্য হারে সংক্রমণ কমেছে। পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে জেলাতেও। দার্জিলিং, নদিয়া, পূর্ব মেদিনীপুর, উত্তর ২৪ পরগনা ও কলকাতায় দৈনিক সংক্রমণ ৫০ থেকে ৯৬-এর মধ্যে নেমে এসেছে। ন’টি জেলায় তা ৩০ থেকে ৪৯-এর মধ্যে। অন্য ন’টি জেলায় তা পাঁচ থেকে ২৩।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.