প্রশ্ন ১. বাংলাদেশে কি উদ্বাস্তু কোনো সমস্যা?
২. বাংলাদেশ তৈরির ৪৫-৪৬ বছরের মধ্যে একজন মুসলমান উদ্বাস্তুও কি পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশে গেছেন?
৩. পাঞ্জাব আর বাংলা একই সময়ে ভাগ হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গে এখনও উদ্বাস্তু সমস্যা আছে। পাঞ্জাবেও কি আছে এই সমস্যা?
৪. ‘উদ্বাস্তু’ আর ‘অনুপ্রবেশকারী’-র অর্থ কি এক?
৫. রিফিউজি বা উদ্বাস্তু এবং ইনফিলটেটর বা অনুপ্রবেশকারীর ডেফিনিশন বা সংজ্ঞা কি বিজেপি-আরএসএস বানিয়েছে?
৬. অসমে জাতীয় নাগরিকপঞ্জির কাজ শুরুর চেষ্টা কি বিজেপি-আরএসএসের মস্তিষ্কপ্রসূত?
৭. এই প্রশ্নোত্তর নিয়ে বঙ্গ বুদ্ধিজীবীমহল কি কখনও আলোচনা করেছেন?
—- এইসব অপ্রিয় প্রশ্নের উত্তর কেউ দিতে এগিয়ে আসবেন না। কারণ, সব প্রশ্নেরই উত্তর হবে ‘না’। তারা বরং সত্যকে অস্বীকার করে এই বলে চেঁচাবেন, এনআরসি-র ফলে ‘বাঙালি’ খেদাও হবে।
আরে, এই ‘বাঙালি’ কারা? বাংলা ভাষায় কথা বললেই কী তাকে ‘বাঙালি’ বলবো? জাপানি ভাষায় কথা বলা চীনাম্যানও কি জাপানি? ফরাসি ভাষায় গড়গড় করে কথা বলতে থাকলেই কী আপনি ফরাসি হবেন? বঙ্গে কয়েক হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য যারা ভেঙে ফেলে, যারা ঐতিহ্য-ব্রতীকে মেরে ফেলে, তারা কি ‘বাঙালি’ পদবাচ্য?
একটি নিরবচ্ছিন্ন প্যানোরামা তৈরি করে রেখেছে ছদ্মবেশী শ্রেণির বাঙালি। তাদের নানান দুষ্ট প্রোপাগাণ্ডা! তারা কাজেকর্মে বঙ্গ-সংস্কৃতির চিরকালের বিরোধী, অথচ মুখে সবসময় তোতাপাখির মতো ‘বাঙালি’ আওড়ায়। পশ্চিমবঙ্গের সবচাইতে ক্ষতি তারাই এতদিন করেছে। তারা অন্য রাজ্যের ভারতীয়দের সঙ্গে বাঙালির বিভেদ ঘটিয়ে নিজেদের গোপন উদ্দেশ্য সাধনের চেষ্টা করে গেছে। তাদের প্রত্যেকের মধ্যে মুসলিম তোষণের বড় বড় গল্প লেখা আছে। তাই এই প্রশ্নগুলি নিয়ে আলোচনা হোক, চাইবে না তারা। তাতে প্রকাশিত হয়ে যাবে বাংলাদেশে কিভাবে হিন্দুরা মুসলমানদের অত্যাচারে আক্রান্ত হয়েছিল, এই সব কাহিনি।
ধারণা করা যেতে পারে, এক ছদ্মবেশী বাঙালি নোবেল বাবুর তত্ত্বকে প্রতিষ্ঠা দিতে চায় তারা — বাংলাদেশে হিন্দু নিধনযজ্ঞে ওদেশের মুসলমানদের জন্য স্বাভাবিক ল্যান্ড-রিফর্ম হয়ে গেছে। কত নিষ্ঠুর এবং হিন্দুবিদ্বেষী হলে এমন মতবাদ দেওয়া যায়! পশ্চিমবঙ্গের উদ্বাস্তু সমস্যাকে চিরকালের জন্য মিটিয়ে দিতে চায় না এরা। এই সমস্যা চিরকালের জন্য মিটে যাবে, যদি এ রাজ্যে লাগু হয় CAA এবং NRC. এবার বুঝে নেবার চেষ্টা করবো, CAA কি? কারও কথা শুনে নয়। আইনটির তন্বিষ্ট পাঠ করেই তা জানবো। আর এই কথাটি বারবার স্মরণ করিয়ে দেবো, এই আইনে কোথাও লেখা নেই যে, প্রকৃত ভারতীয় মুসলমানদের ভারতবর্ষ থেকে কখনও তাড়িয়ে দেওয়া হবে। মিথ্যার বেসাতি বন্ধ হোক। অন্যের হাতে ঝাল খাবো না।
এই আইনে আছে — হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন, পার্সি এবং খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী যেকোনো মানুষ যারা আফগানিস্তান, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান এসব দেশে সংখ্যালঘু, তারা কেন্দ্রীয় সরকারের পাসপোর্ট আইন এবং বিদেশি সনাক্তকরণ আইনের অধীনে আর বেআইনি অনুপ্রবেশকারী বলে গণ্য হবেন না। অর্থাৎ এই আইন প্রণয়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশী হিন্দুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রস্তাব এনেছে ভারত সরকার। এই আইনে তিনটি দেশের ছয়টি সম্প্রদায়ের লোকজনকে ভারতীয় নাগরিকত্ব হাসিল করতে দেওয়া হবে। আগে ১১ বছর পূর্ব থেকে তাদের ভারতে বসবাস করতে হত, এই আইনে এখন মাত্র ছয় বছর বাস করলেই চলবে৷
তাহলে সমস্যাটা কোথায়? সমস্যা হল, মুসলিম তোষণকারীরা বলছে, এর মধ্যে মুসলমানকেও ঢোকাতে হবে। অর্থাৎ ওই তিন দেশ থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশ করে মুসলমানেরা এদেশে এসে থাকলে, তাদেরও ভারতীয় নাগরিকত্ব দিতে হবে। এটা কি হয়? এই তিন ইসলামিক রাষ্ট্রে মুসলমানরা কি অত্যাচারিত? এই তিন রাষ্ট্রে মুসলমানদের সম্পদ কী নিয়মিত লুঠ হয়? ধর্মীয় কারণে তাদের লক্ষ-হাজার নারী কি ধর্ষিতা হয়? তারা কি সাম্প্রদায়িক হত্যার ভয়ে নিজের দেশ ত্যাগ করেছেন? যদি না হয়, তবে তারা শরণার্থীর তকমা কিভাবে পাবেন? তারা নিজের দেশে জনসংখ্যার চাপে ঠিকমতো খেতে পায় না, পরতে পায় না, স্বাস্থ্য রাখতে পারে না; তাই যদি উন্নয়নের সুযোগ সুবিধা পেতে ভারতে দলে দলে চলে আসে, তারা শরণার্থী পদবাচ্য হবে না, তাদের বলা হবে অনুপ্রবেশকারী। এদের মধ্যে অনেকে ভারতের খেয়ে-পরে ভারত বিরোধিতায় সামিল হয়, ভারতকে ভেতর থেকে দুর্বল করে, দেশদ্রোহী বিশ্বাসঘাতক তৈরি করে। আর সংখ্যালঘু ভোটের লোভে এই দেশবিরোধী শক্তিকে কাজে লাগায় এ রাজ্যের সুবিধাবাদী রাজনৈতিক দলগুলি। তারাই চাইছে অনুপ্রবেশকারী মুসলমানদের ভারতে রেখে দিতে, আর প্রকৃত হিন্দু শরণার্থীদের ভুল বুঝিয়ে কেন্দ্র সরকারের বিরোধিতা করতে। তারা বুঝতে পারছে, এনআরসি লাগু হলে অবৈধ সংখ্যালঘু ভোট অকেজো হয়ে যাবে। এ রাজ্যের যাবতীয় রাজনৈতিক অস্থিরতা বন্ধ হয়ে যাবে। তাই এই বিরোধিতা।
বাঙালি কী ভুলে গেলো, বাংলার প্রবাদ? “আগে দিয়ে বেড়া/তবে ধরো গাছের গোড়া”। আমাদের দেশ ভারতবর্ষ একটা বৃহত্তর বাগান। আমরা সকলে তার জীবনবৃক্ষ। জীবন জীবিকার সুস্থিতির জন্য এবং নিরাপত্তার জন্য রাষ্ট্রীয় বেড়া দিতে হবে। তাই এনআরসি চালু করতে হবে, সিএএ আইন লাগু করতে হবে। গেট খুলে জন্মনিয়ন্ত্রণহীন মানুষদের ভারতে ঢুকতে দিলে ‘ভাগের মা গঙ্গা পাবে না’। ভারতের সম্পদ ভারতবাসীর জন্য পর্যাপ্ত কিন্তু ঘুসপেটদের জন্য নয়, অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের জন্য নয়। আর দয়া করে কেউ বৈধ ভারতীয় মুসলমানদের সঙ্গে ঘুসপেটদের গুলিয়ে দেবেন না। সিএএ কখনোই মুসলমান বিরোধী আইন নয়।