আজ বৈশাখী পূর্ণিমা। এই তিথিতেই যশোরের সিংহাসনে বসেছিলেন রায়শ্রেষ্ঠ বঙ্গবীর মহারাজ প্রতাপাদিত্য। নিজের জীবদ্দশায় চার-চারটে শত্রুর সাথে লড়াই করেছেন। মগ, মোগল, পর্তুগীজ এবং পাঠান। যতবার ভিনদেশীদের আক্রমণের মুখে পড়েছে বাংলা, ততবার ঝলসে উঠেছে প্রতাপের তলোয়ার।
জীবনে একটিমাত্র যুদ্ধে হেরেছিলেন তিনি, আর সেটাই তাঁর শেষ যুদ্ধ। ওই যুদ্ধে তাঁর স্বজাতির লোকেরা বিশ্বাসঘাতকতা না করলে বাংলার ইতিহাস, বাঙালির ইতিহাস একেবারেই অন্যরকম হত।
যশোরের ইতিহাস বলতেই রাজা প্রতাপাদিত্যের ইতিহাস। অখন্ড ভারতের ইতিহাসে রাজা প্রতাপাদিত্য ছিলেন অ্যায়রনম্যান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। মহারাষ্ট্রের শিবাজি জন্মের বহুপূর্বেই রাজা প্রতাপাদিত্য এই বঙ্গের বিখ্যাত রাজা ছিলেন। এজন্য তাকে বাংলার শিবাজি বলা হয়৷
প্রতাপাদিত্য তিনি দেবভাষা সংস্কৃত ও বেদ চর্চায় ছিলেন পারদর্শী। রাজ্য পরিচালনায় বিশেষ দক্ষতার পরিচয় দেন। ১৬০০ খ্রিঃ প্রতাপের ক্ষমতা ও খ্যাতি সমগ্র ভারতবর্ষেই ছড়িয়ে পড়েছিলো।
কবি ভারত চন্দ্র তাই লিখেছিলেন,
-“যশোর নগর ধাম প্রতাপ আদিত্য নাম মহারাজা বঙ্গজ কায়স্ত নাহি মানে পাতশায়, কেহ নাহি আটে তায়ভয়ে যত ভূপতি দ্বারস্থবরপুত্র ভবানীর প্রিয়তম পৃথিবীর বায়ান্ন হাজার যার পল্লীষোড়শ হলকা হাতি অযুত তুরঙ্গ সাতিযুদ্ধকালে সেনাপতি কালী।”
মহারাজা প্রতাপাদিত্য অবিভক্ত বাংলার যশোর জেলায় জন্মগ্রহন করেন ১৫৬১ সালের আজকের দিনে। পিতা শ্রীহরি, স্ত্রী শরৎ কুমারী নাগ। রাজা প্রতাপাদিত্য ছিলেন বার- ভূইয়াদের অন্যতম। নদীয়া, উত্তর ও দক্ষিন ২৪ পরগণা, যশোর, কুষ্টিয়া, বরিশাল সুন্দরবন পর্যন্ত প্রতাপাদিত্যের সামাজ্র্য বিস্তৃত ছিলো। তিনি আমৃত্যু বিদেশাগত মুঘল সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন নিজ মাতৃভূমি রক্ষায়।
১৮৮৩ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতাপাদিত্যের কাহিনী নির্ভর একটি বিখ্যাত ঐতিহাসিক “বৌঠাকুরানীর হাট” লেখেন। যা আজও বাঙ্গালির নিকট ব্যাপক সমাদৃত।
প্রধানত যে সকল কারনে, (সতীশচন্দ্র মিত্রের মতে) তিনি যুদ্ধ করেছিলেন, তা হলো-
১। আত্মরক্ষা ও আত্মপ্রধান্য স্থাপন করা।
২। পাঠানদের পক্ষ সমর্থন করা, যারা মোঘলদের নিকট পরাজিত হয়েছিলেন।
৩। বঙ্গদেশে হিন্দু রাজ শক্তির পুনঃপ্রতিষ্ঠা।
৪। শুধু মোঘলদের নয়, মগ ও ফিরিঙ্গি দস্যুদের পাশবিক নির্যাতন থেকে তার রাজ্যের মানুষকে রক্ষা করা।
“সেদিন মুঘল- পাঠান দমিয়ে, উঠে দাঁড়ালে প্রতাপাদিত্য, বঙ্গের তুমি হলে মহারাজ, আজও জাগে ভয়শূন্য চিত্ত।”
– তাই বাঙ্গালি হিন্দু জাতীয়বোধের রাজ শক্তি বলতে প্রতাপাদিত্যকেই বুঝি৷ তেজস্বী স্বাভিমানী বাঙ্গালীর হৃদয়ে বহিঃশত্রু মোগলদমনকারী মহারাজা প্রতাপাদিত্যের আর্দশ যুগ যুগ ধরে বহমান থাকুক৷
(বৈশাখী পূর্নিমা, ১৪২৭ বঙ্গাব্দ)
# মতামত লেখকের নিজস্ব