আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণা ধোনির, চোখের জলে বিদায় নিলেন ১৩০ কোটির স্বপ্নপূরণের নায়ক

দেশের জার্সি গায়ে উইকেটের পিছনে আর দাঁড়াবেন না অতি পরিচিত লোকটা। ম্যাচ চলাকালীন ‘মাহি ভাই কেয়া করে’ প্রশ্ন করবেন না সতীর্থরা। রিভিউ নেওয়ার জন্য আর ঠান্ডা মগজের লোকটার পরামর্শ চাওয়া যাবে না। বাইশ গজে হেলিকপ্টার শটে বল বাউন্ডারির বাইরেও চলে যাবে না আর। সোশ্যাল মিডিয়ায় ফলাও করে লেখা যাবে না, ‘মাহি মার রহা হ্যায়’। মনের মণিকোঠায় শুধু ফিরে ফিরে আসবে ২০০৭, ২০১০, ২০১১, ২০১৩, ২০১৬ সালের সুখের স্মৃতিগুলি। আর বুকে পাথর চাপিয়ে মেনে নিতে হবে কঠোর সত্যিটাকে। ভারতীয় দলে আর নেই মহেন্দ্র সিং ধোনি। স্বাধীনতা দিবসে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিলেন ক্যাপ্টেন কুল।


২০০৪-এ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ওয়ানডে অভিষেকটা ভাল হয়নি। খাতা না খুলেই রানআউট হয়ে ফিরেছিলেন ধোনি। পরের ম্যাচ থেকেই শুরু হয় মাহি ম্যাজিক। তারপর ১৫টা বছর কেটে গিয়েছে। আর টিম ইন্ডিয়ার ভরসার আরেক নাম হয়ে উঠেছিলেন ঝাড়খণ্ডের রাজপুত্তুর। কখনও সেরা ফিনিশারের তকমা পেয়েছেন তো কখনও উইকেটের পিছনে দাঁড়িয়ে একটার পর একটা রেকর্ড গড়েছেন। অদ্ভুত সমাপতন, কেরিয়ারের শেষ বিশ্বকাপেরও ইতি হল রানআউট হয়েই


ক্যাপ্টেন হয়েও দলের চড়াই-উতরাইয়ে সর্বদা কুল থেকে গোটা বিশ্বকে বিস্মিত করেছেন বারবার। সাফল্যের উচ্ছ্বাসে লাফিয়ে ওঠেননি কখনও। আবার ব্যর্থতাও ঘাঁড় নুইয়ে পড়েনি তাঁর। নেতার পাশাপাশি হয়ে উঠতে পেরেছেন দলের মেন্টর, পরামর্শদাতাও। সতীর্থদের কোন কোন উপদেশ দিয়ে যে তিনি বিশ্বের প্রতি প্রান্তে ভারতের সাফল্য গাঁথা ছড়িয়ে দিয়েছেন, তা হয়তো চিরকাল অজানাই থেকে যাবে ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে। ১৩০ কোটির ভারতবর্ষ শুধু জানবে, বাইশ গজে জিয়নকাঠি ছুঁইয়ে তাদের স্বপ্নপূরণ করেছেন ধোনি। সেই ১৩০ কোটির চোখেই জলেই বিদায় নিলেন এম এস

২০০৭ থেকে ২০১৬- সীমিত ওভারের ক্রিকেটে নেতৃত্বের দায়িত্ব নিয়ে ভারতকে জগতসভার শ্রেষ্ঠ আসনে বসিয়েছেন ধোনি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, এশিয়া কাপ থেকে ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেতাব, দেশের জার্সি গায়ে ধোনির ভাঁড়ার কানায় কানায় পূর্ণ। তা সত্ত্বেও কেরিয়ারের সায়াহ্নে এসে আতস কাচের নিচে রাখা হয়েছে তাঁর পারফরম্যান্সকে। ভারতীয় দলের সর্বকালের সবচেয়ে সফল ক্যাপ্টেনও সমালোচনার উর্ধ্বে থাকতে পারেননি। বারবার প্রশ্ন তোলা হয়েছে, কবে বিদায় নিচ্ছেন? যে ক্রিকেটার দলের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে রাতারাতি টেস্ট কিংবা ওয়ানডের নেতৃত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন, তাঁকেও মনে করিয়ে দেওয়া হয়, বিদায়ের সময় হয়েছে। তবে তাঁর সময় কখন ফুরোবে, তা সবচেয়ে ভাল তিনিই জানতেন। আর সেটাই করলেন।

কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, ম্যাঞ্চেস্টার থেকে মেলবোর্ন, মাহি ম্যাজিকে মুগ্ধ হয়েছে গোটা বিশ্বতাই বুট জোড়া তুলে রেখে ক্রিকেটকে অনেকখানি গরিব করে দিলেন ধোনি। শেষ হল ভারতীয় ক্রিকেটের আরও একটা সোনালি অধ্যায়। ধৈর্য, একাগ্রতা, পরিশ্রম আর মাথা ঠান্ডা রেখে লক্ষ্যে এগিয়ে চলার শিক্ষাই দিয়ে গেলেন সবার প্রিয় মাহি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.