সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং যেমন করোনা(corona) ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া অনেকটাই আটকায়। তেমনই যাঁদের মধ্যে উপসর্গ রয়েছে সেগুলিও ধীরে ধীরে কমতে থাকে। এমনই বলছেন বিজ্ঞানীরা।
ডেলি মেলের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রথমে যে পরিমাণ ভাইরাস মানুষের শরীরে ঢোকে, সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং বজায় রাখলে তা কমতে থাকে। ভাইরাস যদি তার প্রভাব ও ভার বাড়াতে থাকে তা হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার পক্ষে লড়াই করাটা আরও কঠিন হয়ে ওঠে।
তাই শুধু করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়াকে আটকাতে নয়। যাঁদের শরীরে কিছু উপসর্গ দেখা যাচ্ছে তাঁদেরও বাড়িতেই থাকা উচিত। বাড়িতে সকলের থেকে আলাদা থেকে রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়লে সেই উপসর্গও কমতে থাকে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, যাঁরা সরাসরি কোনও করোনা আক্রান্ত রোগীর কাশি ও সর্দির থেকে ইনফেক্টেড হন, তাঁদের শরীরে এই ভাইরাসের বেশি পরিমাণ পার্টিকলস ঢুকে পড়ে। ফলে তাঁরা দ্রুত অসুস্থ হতে থাকেন। কিন্তু কোনও জড় বস্তু, যেখানে করোনা ভাইরাসের কোনও কণা রয়েছে, তা ধরে যদি কেউ আক্রান্ত হন তা হলে উপসর্গগুলি খুবই সামান্য থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা আস্তে আস্তে কমতে থাকে। কারণ এক্ষেত্রে শরীরে রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা কোভিড ১৯ এর সঙ্গে লড়ার বেশ কিছুটা সময় পায়। অন্যদিকের সরাসরি কারও কাশি বা সর্দি থেকে আক্রান্ত হলে সেই সময় পাওয়া যায় না।
যেমন ধর্মগুরুরা কোভিড ১৯ এ আক্রান্ত হয়ে পড়লে তা খুবই ঝুঁকিবহুল হয়ে পড়ে। কারণ তাঁরা রোজ হাজার মানুষের সঙ্গে দেখা করে। সরাসরি কথা বলেন। যেখান থেকে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেশি। আর অধিকাংশ ধর্মগুরুই প্রবীণ নাগরিক তাই রোগ প্রতিরোধ শক্তিও কম থাকে। ইটালিতে এমন ৬০ জন ধর্মগুরু ও ৬০ জন চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে।
লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের বিশেষজ্ঞ ওয়েন্ডি বার্সলে বলছেন, ফুসফুসে কতটা পরিমাণ ভাইরাস ঢুকেছে তার উপরেই নির্ভর করে আক্রান্ত কতটা অসুস্থ হয়ে পড়বেন। এক্ষেত্রে কারোর খুব জ্বর, শ্বাসকষ্ট হতে পারে। কিন্তু পরোক্ষ ভাবে জড় বস্তুর মাধ্যমে সামান্য ভাইরাস ঢুকলে হালকা কাশিও হতে পারে।
এই ভাইরাস শরীরে ঢুকে পড়ার পরে ক্রমশ বড় হতে থাকে বা প্রভাব বিস্তার করতে থাকে। এখানেই বড় ভূমিকা পালন করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। প্রথম দিন থেকেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যদি শক্তিশালী থেকে এর সঙ্গে লড়তে সক্ষম হয় তা হলে উপসর্গ কমতে থাকে। কিন্তু কারও কাশি থেকে অনেকটা পরিমাণ ভাইরাস প্রথমেই ঢুকে পড়লে রোগ প্রতিরোধ শক্তির পক্ষে তার সঙ্গে লড়া কঠিন হয়ে ওঠে।
কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানুষ প্রথমে হালকা কাশি বা সর্দিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। তাঁরা ভাবছেন কোভিড ১৯ এ আক্রান্ত হওয়া মানেই চরম পরিমাণে অসুস্থ হওয়া। আর এই ভুল ধারণা নিয়ে তাঁরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং করোনাকে আরও ছড়িয়ে পড়তে সাহায্য করছেন।
কিন্তু চিকিৎসকরা বলছেন করোনা ভিন্ন মানুষের শরীরে ভিন্ন প্রভাব ফেলতে পারে। ফলে উপসর্গও যে সবার একরকম হবে তার কোনও মানে নেই। সেক্ষেত্রে প্রথম দিনই হালকা কাশি দেখেই কেউ যদি সাবধান হয়ে আলাদা হয়ে যান এবং রোগ প্রতিরোধ বাড়ানোর জন্য ঠিক মতো খাওয়াদাওয়া করেন, তা হলে সেই উপসর্গগুলি কমতে থাকে। রোগ প্রতিরোধ শক্তি যদি খুব শক্তিশালী হয় তা হলে আর সেই ভাইরাস শরীরে গিয়ে বড় হতে পারে না।
কিন্তু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এবং অনেকটা পরিমাণ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে পরিণতি খুবই খারাপ হয়। এক্ষেত্রে ভাইরাস গিয়ে বড় হতে থাকে এবং নিউমোনিয়া, কিডনি ফেলিওর, বা সেপসিসও হতে পারে। বলছেন লন্ডনের ডক্টর স্কিনার।
ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালে একটি সমীক্ষার রিপোর্ট পেশ করা হয়। সেখানে চিনের ৭৬জন করোনা রোগীকে পরীক্ষা করা হয়। এদের মধ্যে ৮০ শতাংশের হালকা উপসর্গ যেমন কাশি সর্দি দেখা যায়। কিন্তু বাকিরা হাসপাতালের আইসিউতে নিউমোনিয়া বা আরও সাংঘাতিক উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হন। সমীক্ষা থেকে দেখা যায়, যাঁদের শরীরে ভাইরাসের পরিমাণ বেশি তাঁদের ক্ষেত্রেই উপসর্গগুলি আরও সাংঘাতিক হয়ে ওঠে।
এই জন্যই বিশেষজ্ঞরা হালকা উপসর্গ দেখলেও বাড়িতে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন। রাস্তায় বেরোলেও পর্যাপ্ত দূরত্ব বজায় রাখা এবং মাস্ক ও গ্লাভস পরতে বলছেন তাঁরা। কোনও ভাবেই হাত না ধুয়ে তা নাকে মুখে বা চোখে না লাগাতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা।