এই সরকার সরকারি আধাসরকারি কর্মী নির্বাচনের প্রতিটি স্তরে তুমুল দুর্নীতি আর স্বজনপোষণ চালিয়ে যাচ্ছে। গ্রেড এ থেকে গ্রুপ ডি – কোনও ছাড়কাট নাই। পাড়ার পাতি নেতা থেকে মন্ত্রীসভার মন্ত্রী -সব্বাই চাকরির দালাল। এ কি নতুন কথা! সব্বাই সব জানে।
পিএসসি’তে যা চলছে তার চাইতে বড় নোংরামি আর কিছু হয়না। ভাবতে অবাক লাগে, ভাবী আমলাদের অনেকেই এরাজ্যে এই অনৈতিক সুবিধা পেয়ে চেয়ারে বসেছেন, বসছেন, ভবিষ্যতেও হয়ত বসবেন। এঁরা সংবিধান মেনে সমস্ত নাগরিকের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করবেন? প্রবল সন্দেহ আছে।
প্রাইমারি থেকে হায়ার সেকেন্ডারি – স্কুল শিক্ষকতার পেশা তো মোটামুটি নিলামে তোলা হয়ে গেছে! আট লাখ, দশ লাখ, পনের লাখ! টাকা দিয়েও চাকরি হয়নি – এমন অভিযোগ প্রায়ই আদালত অব্দি গড়িয়েছে শোনা যায়! শিক্ষামন্ত্রী একদা প্রকাশ্য সাংবাদিক সম্মেলনে দলীয় কর্মীদের টাকা ফেরত দেওয়ার আহ্বান পর্যন্ত জানিয়েছিলেন। অতএব সকলেই সবকিছু জানেন।
পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়, অথচ স্বচ্ছ মেধাতালিকা প্রকাশ পায় না। কে কোন বিভাগে কত নম্বর পেলেন, তালিকার কত অব্দি কারা ইন্টারভিউতে ডাক পেয়েছেন – সেসব তথ্য গোপন থাকে। আদালতের নির্দেশে অথবা হস্তক্ষেপে তালিকা যদিওবা প্রকাশ পায়, তাতে দেখা যায় ফাঁকফোকর অজস্র। পরে যাতে নিলাম-সফল উমদা ডাকদারদের তালিকায় ইচ্ছেমত গুঁজে দেওয়া যায় আরকি! এই আপনার স্বচ্ছ প্রশাসন! ছিঃ!
আর, কোথায় লুকিয়ে থাকেন সেই সুশীল সমাজের দাঁড়কাক গুলি, সাধের ঝোটন বাঁধা নোটন পায়রাগুলি! লোকসভা নির্বাচনে সাধারণ ভোটারদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব নিয়ে কেন্দ্রীয় আধাসেনা বাহিনী আসায় যাঁরা রাজ্যের অপমান হয়েছে বলে বকবকম বকবকম করছিলেন! “সাত দফা নির্বাচন কেন হবে, এ রাজ্য তো শান্তির ওয়েসিস”, নির্বাচন কমিশনকে যাঁরা গাল পাড়ছিলেন – সেই উচ্ছিষ্টভোগী সারমেয়র দল চোখে ঠুলি পরে বসে থাকেন নাকি বাকি সময়?
সাধারণ পঞ্চায়েত আর পৌরসভার ভোটে যেখানে শতাধিক লোক মারা যায়, সে রাজ্যে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ আছে! কজন নিজের ভোট নিজে দিতে পারেন এ রাজ্যে! নির্লজ্জ, মাজা ভাঙা, শিরদাঁড়াহীন প্রশাসনের কোনও অফিসারের দম নেই এর প্রতিবাদ করে। দময়ন্তী সেন নয় রাজীব কুমাররাই আদর্শ এখানে।
কারা যেন স্কুল শিক্ষকের চাকরিতে বহাল হবার জন্য রাজধানীর রাজপথে অনাহারে অবস্থান বিক্ষোভ করছেন! কই কাগজে তো কিছু লেখেনি! সুশীল সমাজের গীতা বাইবেল কোরান আনন্দ বাজার নীরব বলে শুনি! সুমন চাটুজ্জ্যে সিবিআই হেফাজতে গেলে খবর করা যাবে না, এসএসসি পাশ করিয়েরা রাস্তায় ন্যায্য দাবীতে অবস্থান বিক্ষোভে বসলে খবর করা যাবে না- প্রথম শ্রেণীর সেকুলার কাগজের কত দায়, ভাবা যায়!
মানুষকে এরা সকলে মিলে গরু ভেড়া বানিয়ে রেখেছে! উস্কালে রাস্তায় নামবে, মোমবাতি জ্বেলে। নইলে সব সুশীলতার কবুতর, নিজ নিজ খোঁয়াড়ে বকবকম বকবকম! আমরা সবাই তাই। স্বার্থপর। পরশ্রীকাতর। ভীতু। দল ছাড়া কিচ্ছু বুঝিনা। হয় এর নয় ওর। এই সমীকরণের সরল সমস্যা হল, শাসক আমাদের পাত্তা দেয়না আর। জানে সব ভাগাভাগি হয়ে আছে। একসাথে এরা ক্ষেপবে না। পক্ষে বিপক্ষে ঠিক ভাগ হয়ে যাবে। এটা ভেঙে নিজেদের স্বার্থে কবে মানুষ নামবে রাস্তায়?
মারো গোলি দলবাজিকে। সকলে মিলে নির্দল হয়ে যাই চলুন একসাথে। কোনও দলকে তোল্লাই দেওয়ার দরকার নেই। মন্দির মসজিদ গরু শুয়োর সব বাদ দিন। মানুষের কথা ভাবুন। নিজেদের কথা ভাবুন। নিজেদের সন্তানদের কথা ভাবুন। দলীয় কর্মসূচী, দলীয় নীতিকে আস্তাকুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলুন। এদেশের সংবিধানই আমাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য যথেষ্ট। পৃথক নীতির কি প্রয়োজন! সবগুলি দলের দলীয় অফিসগুলি ভেঙে গুঁড়িয়ে রাস্তায় মিশিয়ে দেওয়া দরকার। গণতন্ত্রে দালালরাজের কোনও দরকার নাই। প্রতিটি রাজনৈতিক দলই সমস্ত দুর্নীতির আঁতুড়ঘর। সমাজবিরোধীদের বুকের বল, আশ্রয়স্থল। আমরা আমাদের হকের অধিকার সরাসরি নিজেরাই সব বুঝে নেবো। কোনও রাজনৈতিক দাদা, দিদিকে ফোঁপরদালালির সুযোগ দেওয়া হবেনা।
পারবেন একজোট হতে? পারলে, লোকসভাটা সত্যিকারের লোকসভা হত। বিধানসভায় মানুষের প্রতিনিধিত্ব নেতা নয়, কোনও মানুষ করত। এমন চাকুরীর দাবী নিয়ে ছেলে কোলে অনশনে বসতে হত না কোনও মা’কে। কোনও সমাজবিরোধী, ক্রিমিনালকে উঠতে বসতে সেলাম ঠুকতে হতনা কোনও পুলিসভাইকে। যাঁর যেখানে থাকার কথা তিনি সেখানেই থাকতেন। যোগ্য অযোগ্যের সঠিক বিচার হত। যাদের জেলে থাকার কথা তারা জেলে থাকত, যারা বাইরে থাকার তারা থাকত বাইরে। দল দল করেই দেশটা রসাতলে গেল। যত ঠগ, জোচ্চর, গাঁটকাটা মিলে প্রশাসন, বিচার, আইন আদালতের বারোটা বাজিয়ে ছাড়ল। এবার অন্তত মানুষ নিজেদের স্বার্থে একজোট হোক। সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। দিকে দিকে যোগ্য নির্দল প্রার্থীদের জিতিয়ে দিন। বাকিটা আপনাআপনি হয়ে যাবে। ক্ষমতা থেকে সরে গেলেই সব দলের গঙ্গাপ্রাপ্তি আর কিছু সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
সুপ্রীতি মাইতি