পশ্চিমবঙ্গে, দুর্বৃত্ত – অবৈধ অনুপ্রবেশকারী – পর্দার আড়ালে থেকে ক্যামেরার সামনে

২১ জুলাই, ২০১০-তে, আসামের সমস্ত সংখ্যালঘু ছাত্র ইউনিয়ন বরপত জেলার প্রশাসকের কার্যালয় আক্রমণ করে । এটি পরবর্তীকালে হিংস্র আকার ধারণ করে এবং কিছু লোক হতাহতের কারণে সরকার ১৩২ জনকে ক্ষতিপূরণ প্রদান করে। পরবর্তীকালে একটি আরটিআই এবং গুয়াহাটি হাইকোর্ট এর আদেশের ভিত্তিতে সরকার সর্ব সমক্ষে প্রকাশ করেছিল , যে ১৩২ জনকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল তাদের মধ্যে মাত্র ৪২ জনের নাম বা তাদের অভিভাবকদের নাম ১৯৭১ সালের ভোটার তালিকায় ছিল। এর থেকেই স্পষ্ট বোঝা যায়, যারা সেদিন ডিসির অফিসে আক্রমণ করেছিল তাদের মধ্যে ৯০ জন বিদেশি ছিল। ইতিহাসের পটে সাম্প্রতিক-

দেশ, কাল , রাজনীতি ও উদ্বাস্তু। হ্যাঁ উদ্বাস্তু। রিফিউজি, যাঁদের দেশ নেই। মানে একটি দেশ ছিল, তাঁদের নিজেদেরই, কিন্তু মেরে দূর করে দেওয়া হয়েছে কেবল এই মর্মে যে তাঁরা হিন্দু, তাঁরা শিখ, তাঁরা বৌদ্ধ , তাঁরা জৈন ,তাঁরা খ্রিস্টান; অর্থাৎ তাঁরা প্রত্যেকেই অমুসলিম। তাঁরা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে, প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে, নিজের স্ত্রী ও সন্তানের ইজ্জত বাঁচানোর তাগিদে চলে এসেছেন ভারতে। সেখানে কলোনী, রিফিউজি ক্যাম্পে দীর্ঘ সত্তরটি বছর ধরে নিজের পরিচয় খুঁজে বেড়িয়েছেন। চোখের জলে ভিজেছেন ডিটেনশন ক্যাম্পগুলিতে। সেই সব পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ হতে আসা মানুষ গুলোকে যোগ্য সম্মান প্রদান করা হল ক্যাব ( CAB ) পাশ করিয়ে। কিন্তু…

ক্যাব পাশ হওয়ার পর শুরু হল জিহাদী সন্ত্রাস। উত্তরপূর্ব ভারতের রাজ্যগুলি এবং পশ্চিমবঙ্গের কিছু বিশেষ ধর্মীয় মানুষের বাস যেসব স্থানে সেসব জায়গায়। উত্তর-পূর্ব ভারতের বেশ কিছু রাজ্যে রয়েছে নানা ধরনের বৈদেশিক মদতপুষ্ট সন্ত্রাসী সংগঠন , যারা ভাষাগত বিদ্বেষ দিয়ে বাঙ্গালী ও অন্যভাষাভাষী হিন্দুদের উপরে চরম বিদ্বেষ ও আক্রমণ শানাচ্ছে। এবং তার সঙ্গে ভারতের অর্থাৎ সরকারী সম্পত্তি নষ্ট করছে। প্রসঙ্গত সেখানে অবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সেনা মোতায়েন করা ও প্রশাসন কঠোর ভূমিকা নিয়েছে।

এবার চোখ ফেরাই আমাদের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে। শ্যামাপ্রসাদ মুখপাধ্যায়ের স্বপ্নের পশ্চিমবঙ্গ একমাত্র বাঙ্গালী হিন্দুর হোমল্যান্ড। বিগত বেশ কিছু বছর ধরে এখানে ডেমোগ্রাফিক চেঞ্জ শুরু হয়েছে। এ যাবৎ পশ্চিমবঙ্গ কালিয়াচক হতে বসিরহাট বহু দাঙ্গার সাক্ষী হয়েছে।

যাক, প্রসঙ্গত বলে রাখি ক্যাব কিন্তু এখন আর কোন বিল নয়, ক্যাব এখন একটা আইন যা লোকসভা, রাজ্যসভা এবং প্রেসিডেন্টের দ্বারা স্বাক্ষরিত হয়ে গেজেট আকারে সংবিধান এবং গণতান্ত্রিক ভাবে অনুমোদন প্রাপ্ত হয়েছে, যা পালন করা দেশের প্রত্যেকটি নাগরিকের অবশ্য কর্তব্য।

নাগরিকত্ব আইন এই রাজ্যে কার্যকর হতে দেওয়া হবে না বলে শুক্রবারই জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। তারই মধ্যে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে একের পর এক অশান্তির খবর আসছে।

গতকাল , দুপুরবেলা থেকে উলুবেড়িয়া, বসিরহাট, আমডাঙ্গা, মুর্শিদাবাদের বেলডাঙ্গা ইত্যাদি অঞ্চলে ব্যাপক ভাবে সন্ত্রাস শুরু হয়। উলুবেড়িয়ার একদল মানুষ রেল আটকায়।

কিছুটা পরেই তারা হিংসাত্মক হয়ে ওঠে। দাঁড়িয়ে পড়া করমণ্ডল এক্সপ্রেসকে লক্ষ্য করে ইট, পাথর ছোঁড়া শুরু হয়। রেলের অফিসের উপরও আক্রমণ হয়। কয়েকজন আহত হয়েছেন বলেও খবর মিলেছে। উলুবেড়িয়া স্টেশনে আটকে রয়েছে কাণ্ডারী এক্সপ্রেস। এছাড়াও বেশ কয়েকটি এক্সপ্রেস ও স্থানীয় ট্রেন আটকে রয়েছে বিভিন্ন স্টেশনে। সব মিলিয়ে দক্ষিণ পূর্ব রেলের হাওড়া থেকে খড়্গপুর অংশে ট্রেন চলাচল বিপর্যস্ত।

শুক্রবার দুপুর থেকে নিমদিঘির নরেন্দ্র মোড় এলাকায় বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন একটি গোষ্ঠী। ৬ নম্বর জাতীয় সড়কে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে দেন তাঁরা। পোড়ানো হয় কুশপুতুল।

গরুহাটা, পারিজাত এলাকার ছবিও ছিল প্রায় একইরকম। ওই এলাকাগুলিতেও অশান্তি শুরু হয়। বাগনানের পরিস্থিতিও যথেষ্ট থমথমে। লাইব্রেরি মোড়ে টায়ার জ্বালিয়ে পথ আটকে দেয়। তার ফলে স্বাভাবিকভাবেই ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরুদ্ধ হয়ে যায়। দু’ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা অবরোধের জেরে বিপাকে পড়েন আমজনতা। সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছতে না পেরে রীতিমতো বিরক্ত তাঁরা। উত্তপ্ত হতে থাকে উলুবেড়িয়া স্টেশন চত্বরও। সন্ত্রাস সৃষ্টিকারী একদল ব্যক্তি ট্রেন লক্ষ্য করে পাথর ছোঁড়ে। তাতে ট্রেনের চালক গুরুতর জখম হন। ট্রেনের কামরা তছনছ করে চলে যথেচ্ছাচার। সন্ত্রাসের মুখে যাত্রীরা অসহায় হয়ে পড়ে। উলুবেড়িয়া স্টেশনে রেললাইনের উপরে বসে পড়ে রেল ব্যবস্থাকে অকেজো করে দেয়। যেখানে সেখানে দাঁড় করিয়ে দেয়া হয় বেশ কয়েকটি লোকাল এবং এক্সপ্রেস ট্রেন।

ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয় মুর্শিদাবাদের বেলডাঙাতেও। পুলিশ থানা আক্রান্ত হওয়ারও খবর মেলে। রেল আটকানো দুর্বৃত্তদের বাধা দিতে গেলে বেধড়ক মারধর করা হয় আরপিএফ কর্মীদের। তাতে গুরুতর জখম হন একজন। তার মানে ক্যামেরায় ধরা পড়া ওই লোকগুলো যারা প্রশাসনকে সরাসরি আক্রমণ করলো, তারা তো ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুযায়ী এক একজন শাস্তিযোগ্য অপরাধী। অসহায় কেবিনম্যানকে মারধরের পাশাপাশি যারা স্টেশনে ভাঙচুর চালালো এবং আগুন লাগলো, তাদের শাস্তি হবে না? এভিডেসিয়াল ডকুমেন্ট হিসেবে এবিপি আনন্দ, চ্যানেল 18 বিভিন্ন চ্যানেল এবং CCTV ফুটেজ তো রয়েইছে।

উলুবেড়িয়া, মুর্শিদাবাদের পাশাপাশি ডায়মন্ড হারবার শাখার বাসুলডাঙা রেল স্টেশন এবং বারুইপুর-ডায়মন্ড হারবার শাখায় রেল আটকায় উন্মত্ত জনগোষ্ঠী।

অশান্তির আঁচ আছড়ে পড়েছে উত্তর ২৪ পরগনার খড়দহ এবং নদিয়াতেও। কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে এবং খড়দহের রুইয়া বাসস্ট্যান্ড অশান্তির কবল থেকে রেহাই পায়নি। ব্যাহত হয় যান চলাচল।

উন্মত্ত জনগোষ্ঠীর ভীতিপ্রদর্শণ দেখলো কলকাতাও। শুক্রবার দুপুরে ওয়েলিংটন মোড় এবং পার্ক সার্কাসের সেভেন পয়েন্টের মতো স্ট্র্যাটেজিক পয়েন্টকে আটকে দিয়ে বুঝিয়ে দিলো রাজধানীকে অকেজো করে দেওয়ার ফর্মুলা।

উপরোক্ত উল্লেখিত বিষয়গুলি থেকে এটা স্পষ্ট করেই বলা যায় যে, এই আন্দোলনগুলির মূল উদেশ্য ছিল ভয় দেখানোর মাধ্যমে সরকারকে তার পদক্ষেপগুলি প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া । এই পদক্ষেপ গুলির মাধ্যমে তারা নিজেদেরকেই বেআইনী অনুপ্রবেশকারী হিসাবে পরিচয় দিয়েছে । স্পষ্টতই কিছু মিথ্যাচারী জনমাধ্যম এবং কিছু মতলবি নেতা-নেত্রী এই দুর্বৃত্তদের সমর্থন করেই চলেছে। তারা জানে না যে তাদের এই মুখোশ মানুষ বুঝতে পেরে গেছে।

যাইহোক দাঙ্গা করে ভয় দেখিয়ে সন্ত্রাসের বাতাবরণ তৈরি করে আইনকে আটকানো যাবে না এটাও মনে রাখতে হবে।

এবার কথা হল যেখানে কেন্দ্র থেকে বলে দেওয়াই হয়েছে ভারতীয় মুসলিমদের এই ক্যাবের জন্য কোনো রকম কোনো সমস্যা হবে না সেখানে হঠাৎ এই বিক্ষোভ কেন? কেনই বা বিশেষ কিছু রাজনৈতিক দলের ক্যাব বিরোধিতা? কেন সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর চলছে? যারা এটা করছে তারা কি তাহলে ভারতের নাগরিক নয়?

তারাই কি তবে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী? প্রশাসন আপনি কি দেখতে পাচ্ছেন বিক্ষোভকারীদের? যাদের ছবি ক্যামেরার সামনে এল তাদের মুখ, পোশাক দেখে – তাদের কী আইডেন্টিফাই করে শাস্তি দেওয়া হবে ?

যারা রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় উস্কানিতে এই অসাংবিধানিক আচরণ করছে তারা কিন্তু আইনের চোখে অপরাধী ছাড়া আর কিছুই না।

আজকের পশ্চিমবঙ্গের ঘটনা একটি লজ্জাজনক ঘটনা, যা রাজনৈতিক বিরোধিতার কারণে কিছুলোক অপরাধপ্রবণ মানসিকতাকে উস্কে দিয়ে আইন বিরুদ্ধ কাজ করানো হয়েছে। কিছু রাজনৈতিক নেতারা আজ সফল কারণ, বিশ্বের চোখে যে সম্প্রদায়টির একটি সন্ত্রাসী প্রতিচ্ছবি আছে, তাইই আরও দৃঢ় ভাবে প্রতিষ্ঠিত হলো। অন্যদিকে সেই সব নেতারা যারা নিজেরা পর্দার আড়ালে থেকে গেলো, এই অপরাধের আসল কারিগর কিন্তু তারাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.