ওপার বাংলার এক ছাত্র। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের ভাস্কর্যের কাজ পোস্ট করতেন। আর তাতেই নজরে পড়ে যান এপার বাংলার এক অধ্যাপকের। সোশ্যাল মিডিয়ায় কাজ দেখে সরাসরি ওই ছাত্রের সাথে যোগাযোগ করেন তিনি। ঠিক করেন এবারে এলাকার পুজোর কাজ তাঁকে দিয়েই করাবেন। ব্যস যেমন কথা তেমন কাজ। পুজোর প্রাক্কালে ডেকে নিলেন ওই ছাত্রকে এপার বাংলায়। এখানে মণ্ডপের দেওয়ালে নিজের অসাধারণ হাতের ভাস্কর্য ফুটিয়ে তুলছেন তিনি। তবে বাড়িতে কথা দিয়ে এসেছেন পুজোতে নিজের দেশেই ফিরে যাবেন। বাড়িতে সবার সাথেই কাটাবেন এবারের পুজো।
অশান্ত বাংলাদেশে সেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশে একাধিক জায়গায় সংখ্যালঘুদের উপরে হামলা হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে সংখ্যালঘুদের ধর্মীয়স্থান। এ নিয়ে সেখানকার হিন্দুরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। সেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেওয়ায় দুই পরশি দেশের সম্পর্ক নিয়ে টানাপোড়েন ছিল। তবে সময় যত গড়িয়েছে সম্পর্কের উষ্ণতা দূর হয়েছে। ভারত থেকে ডিম পিঁয়াজ গিয়েছে তেমনই দুর্গা পুজোর আগে পদ্মার ইলিশ এসেছে এদেশে। ভারতে বাংলাদেশ ক্রিকেট সিরিজও খেলছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গের হুগলিতে দুর্গা মণ্ডপে কাজ করতে এসেছেম বাংলাদেশের এক শিল্পী। বাংলাদেশের সাতক্ষিরা জেলার শ্যামনগরের দীপু বিশ্বাস হুগলির ক্যাওটা নবীন সংঘের দুর্গা মন্ডপে ভাস্কর্য ফুটিয়ে তুলছেন।
ওপার বাংলা থেকে এপার বাংলায় কাজ কিভাবে?
জানা গিয়েছে, দীপু বিশ্বাস বর্তমানে বাংলাদেশের বিএল কলেজে ইতিহাস নিয়ে তৃতীয় বর্ষে পড়াশোনা করেন। পড়াশোনার পাশাপাশি মাটির ভাস্কর্য গড়েন। মাঝে মাঝে সেগুলি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করতেন তিনি। ফেসবুকে তাঁর কাজ দেখার পর তাঁর সাথে যোগাযোগ করেন এপার বাংলার রঙ্গজীব রায়। রঙ্গজীব নবদ্বীপ আর্ট কলেজের সহকারি অধ্যাপক। তিনিই দীপুকে অনুরোধ করেন এপার বাংলায় এসে কাজ করতে। এখানে এসে দীপু মূলত মন্ডপের দেওয়ালে পৌরানিক দেবদেবীর ভাস্কর্য ফুটিয়ে তুলছেন। রঙ্গজীব বলেন, ‘শিল্পীর কোনো দেশে হয়না। তার শিল্প কর্ম সব জায়গায়তেই সমাদৃত হয়। দীপুকে সামাজিক মাধ্যমে পাই। ওর হাতের কাজ অসাধারন। শুধু বাংলাদেশ না ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে অন্য দেশ থেকেও শিল্পীরা এসে থিমের কাজ করেন।’ শিল্পী দীপু বলেন, ‘ভিসা নিয়ে এদেশে এসেছি। আমি মূলত মাটির কাজ করি। কিন্তু এখানে এসে দেখলাম সিমেন্ট বালি দিয়ে কাজ হচ্ছে। বাড়িতে বাবা নেই, মা বোন বৃদ্ধা ঠাকুমা আছেন। পুজোয় দেশে ফিরে যাবো।’
উল্লেখ্য, এবার পুজোয় ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ সরকার। দেশের নেতারা সম্প্রীতির কথা বলছেন। পুলিস দুর্গাপুজো উপলক্ষে প্রাক-দুর্গাপুজো, দুর্গাপুজো চলাকালীন এবং প্রতিমা বিসর্জন ও দুর্গাপুজো-পরবর্তী- এ তিন স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ইতিমধ্যে পুলিসের পুজোকেন্দ্রিক নিরাপত্তার কাজ শুরু হয়েছে। পুজোমণ্ডপের নিরাপত্তায় পুলিস সর্বোচ্চ সতর্ক থেকে দায়িত্ব পালন করবে।