জৈববৈচিত্র্য হচ্ছে এই গ্রহের যাবতীয় জীবনের বিভিন্নতার সমাহার (The total variety of life on our planet). বিভিন্ন ধরনের গাছপালা, পশুপাখি এবং বিভিন্ন পরিবেশে এদের বহু বিচিত্র প্রাণের অভিযোজন মিলেই এই ‘জৈববৈচিত্র্য’। এবং ‘Diversity at all levels of biological organisation’ এই গ্রহের সম্পদ।
১৯৯২ সালে রিও-ডি-জেনেইরোতে জৈববৈচিত্র্যের আন্তর্জাতিক অধিবেশন বসে। যাকে বলা হচ্ছে ‘বসুন্ধরা বৈঠক’ বা Earth summit of United Nations Conference of Environment and Development. ভারত এই বৈঠকের অন্যতম স্বাক্ষরকারী। স্থির হয়, চিরায়ত এবং স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ বহাল রাখতে, মানবজাতির নিরাপত্তার জন্য মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ (Natural Resources) এবং কৌলিক সম্পদ (Genetic Resources) সংরক্ষণ করতে হবে। কারণ বাস্তুতন্ত্রে কোনো জীবের অবদানই নগণ্য নয়। কিন্তু আমরা কি জানি, ভারতবর্ষের শিকড়-সংস্কৃতি জৈববৈচিত্র্য ও তার শুদ্ধ-সংরক্ষণ বিষয়ে কতটা গভীরভাবে ভেবেছে! বাঙ্গলার আলপনার পরতে পরতে যে জৈববৈচিত্র্যের উজ্জ্বল উপস্থিতি, তা কি প্রাকৃতিক সংরক্ষণ বিষয়ে বিশেষ বার্তা নয়? শুধুই কি ধর্মীয় আচরণ? ভারতীয় ঐতিহ্যে অপরিমেয় সৃষ্টির জৈবমূল্য নির্ধারণ তো সেই হয়ে আছে কোন প্রাচীনকাল থেকে!
সৃষ্টির সীমাহীন বৈভব দেখেই তো প্রাচীন ভারতবর্ষের মনোভূমিতে এক ‘বিরাট’ ব্যক্তিত্ব কল্পিত হয়েছে; ভক্তি-শ্রদ্ধায় যাঁর কাছে নত হওয়া যায়! বাঙ্গালার আলপনার মধ্যেও রয়েছে ‘বিরাট’-এর প্রতি উদ্দেশ্য করে বাঙালি মায়ের কামনাবাসনার নানান চলচ্চিত্র — ব্রতপার্বণ, সাধন-আরাধন; আর তাতে নানান জৈববৈচিত্র্যের ছড়াছড়ি!
এদেশ জৈববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ আর এ রাজ্য ছ’টি কৃষি-জলবায়ু অঞ্চলের সমাহারে রচিত। ফলে কৃষি-জলবায়ুর বৈচিত্র্যে প্রাণী ও উদ্ভিদ বিন্যাসে বৈচিত্র্য এসেছে। এই বৈচিত্র্য বাঙ্গালার লোকসমাজ চেনেন, জানেন এবং ব্যবহার করেন নানান ধর্মীয়, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক পটভূমিকায়। জৈববৈচিত্র্য সংক্রান্ত বনবাসী এবং গিরিবাসী মানুষের জ্ঞান-ভাণ্ডারও অপ্রতুল নয়। যে রাজ্য ভৌগোলিক অবস্থানে, জৈববৈচিত্র্য সমাকীর্ণ, সে রাজ্যের লোকসংস্কৃতিচর্চা থেকে তা বাদ যাওয়ার কথা নয়, বাদ যায়ও নি। সে বিষয়ে এই লেখিকারই একটি বই রয়েছে — ‘বাংলার জৈববৈচিত্র্য ও লোকসংস্কৃতি’, তাতে উল্লেখ আছে সামান্য তৃণ থেকে শুরু করে মহীরুহ, মশা-মাছি, হাতি — কোনো কিছুই বাদ পড়ে না লোকসংস্কৃতির উপাদান-উপকরণ থেকে। বর্তমান প্রবন্ধে আলপনার চিত্রগুলিকে পর্যালোচনা করে দেখাতে চাইবো এই জৈববৈচিত্র্য উপস্থাপিত হবার ক্ষেত্রে মনস্তাত্ত্বিক দিকগুলি কীভাবে প্রতিফলিত হয়েছে৷ দেখাতে চাইবো জৈববৈচিত্র্য এবং পরিবেশ রচনার ক্ষেত্রে বাঙ্গলার আলপনা কোথাও কোথাও কাহিনীর জন্ম দিয়েছে। বনচারী সংস্কৃতির ছোঁয়ায়, কৃষি সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতায় আলপনার মণ্ডনশিল্প অতীতের যোগসূত্ররূপে উত্তরসূরীর কাছে বার্তা পৌঁছে দিয়েছে একটি দৃশ্যমান লোকসংযোগ প্রক্রিয়ার সফল মাধ্যমে (Visual folk communication)।
আলপনাকে বলা যায় ব্রতিনী নারীর অথবা পূজারিণীর মনের নীরব অভিব্যক্তি। ঈশ্বরের কাছে বার্তা হিসাবে পাঠানো হয় নারীমনের বহুবিচিত্র কামনাবাসনা, যা একদিন সম্ভব করে তুলতে হবে। পিটুলিগোলা জল দিয়ে মেঝেতে, মাটিতে আঁকা হয় কামনাবাসনার চিহ্ন-সংকেত। যিনি দেখেন তাঁর কাছেও পৌঁছে যায় বার্তাটির প্রকত বক্তব্য। লৌকিক অথবা পৌরাণিক দেবদেবীর কাছে ব্রতিনী কী কী উদ্ভিদ এবং প্রাণিসম্পদ চাইছেন, তা জানা যায়। অতএব আলপনার সংযোগ সামর্থ্য অসাধারণ।
উর্বরা ধরণীর গর্ভস্থ সন্তান হচ্ছে শস্যবৈচিত্র্য। প্রকৃতি যেন গর্ভিণী নারীর মতই ফলবতী। ব্রতের আলপনার নানান আঙ্গিকে ব্রতিনী এই শস্যসম্পদের ছবি পিটুলি গোলায় এঁকে পরমেশ্বরকে বুঝিয়ে দিয়েছেন, গোলাভরা শস্য তার একান্ত অভিপ্রেত। তাই এগুলিকে সামগ্রিকভাবে বলা যায় কামনাত্মক আলপনা৷ সন্তান আর শস্যোৎপাদন তো আলাদা নয়! নারীর শরীর থেকে ফলে মানব-সন্তান আর ধরণীর বক্ষের ধন হচ্ছে ফসল। এই দু’য়ের মধ্যে দারুণ মিল। সন্তান আর শস্যের প্রতি ব্রতিনী নারীর প্রগাঢ় বিস্ময়বোধ আলপনায় এনে দিয়েছে নানান ফসলের কারুকাজ। হয়তো তার প্রচলন এখন আমরা ততটা দেখতে পাই না, কালশারাল ইরোশন বা সাংস্কৃতিক বিলুপ্তির কারণে হয়তো তা হারিয়ে যাচ্ছে। তবে একদা এসব ছবি ভূমিতে আঁকা হতো। আজও আলপনায় ধান আঁকার সংস্কৃতি ধরে রেখেছে বাঙালি, কারণ গ্রামীণ বাঙালির কাছে ‘ধানই লক্ষ্মী’। আলপনায় ধান, ধানছড়া, মরাইয়ের বহুল ব্যবহার। ধান সম্পর্কিত এই ইঙ্গিত লক্ষ্মীর প্রতীক হয়ে উঠেছে। বাঙালিকে অনেকসময় গমের শিসও আঁকতে দেখা গেছে প্রাণ ভরে। ধানগাছ বাতাসে আন্দোলিত হয়ে ঢেউ খেলে যায়, শস্যের ভারে নুইয়ে পড়ে, তাই আলপনায় ধানের শিস এবং গমের শিস বাঁকানো অথবা লতানো।
বহু লৌকিক আলপনায় রকমারি ফলের সমারোহ চোখে পড়ে। কারণ বাঙালি নানান মরশুমি ফলের প্রাচুর্যে বড় হয়েছে। বাঙালির প্রচল কথায় রয়েছে, “বারোমাসে বারো ফল/না খেলে যায় রসাতল।” আলপনায় আঁকা হয় ঘট, তাতে নারকেলের ছবি। সেঁজুতি ব্রতের আলপনায় গুয়া বা সুপারি গাছের ছবি — কোঁচা দুলিয়ে সুপারিবাগানে গৃহকর্তা ঘুরে বেড়াচ্ছেন। বেলপুকুর ব্রতের আলপনাতেও সুপারি গাছের ইঙ্গিত মেলে৷ ইদানীং কৃষিমেলা, কৃষি আলোচনা সভায় এবং মান্য কৃষি প্রতিষ্ঠানে আলপনায় অথবা রঙ্গলিতে নানান ফল ও সব্জির ভাণ্ড আঁকা হয় বৈচিত্র্যের পরিবেশনার লক্ষ্য নিয়ে। বার্তা এই, অর্থকরী এই ফল ও সব্জিগুলি চাষ করে কৃষককে লাভের মুখ দেখতে হবে। সরকারি আধিকারিক এবং কৃষিবিজ্ঞানীদের কাছে কৃষিজীবী মানুষের বার্তা, এই সমুদায় ফসলের উন্নত-জাতপ্রজাতি আমাদের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসা হোক৷ হয়তো ঈশ্বরের কাছেও এই ডাইভার্সিটি ফার্মিং-এ সফল হবার আবেদন।
লোকসমাজের কাছে সাপ ও উর্বরতার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। তাই সর্পিল লতা সন্তান কামনারই অঙ্গ। প্রত্যক্ষ ক্ষেত্রে মনসাপূজার নানান আলপনায় সাপের অবয়বগত বৈশিষ্ট্য উপস্থিত। পরোক্ষভাবে সর্পিল লতায়, ধানের গুছিতে অথবা মরাইয়ের পাশে সাপের চলার চিহ্নের মতো ছবি আঁকা হয় অনুকরণাত্মক জাদু ফুটিয়ে তোলবার জন্য। সাপের বংশবিস্তারের অনুরূপ উর্বরতা কৃষিক্ষেত্রেও আসুক — এই প্রার্থনা। ইঁদুর দমন করে সাপ, ইঁদুর ফসলের ধ্বংসাত্মক শক্তি (অলক্ষ্মী), সাপ আলপনায় এসেছে কৃষিদর্শনের আলোতে৷ বাস্তুতন্ত্রে সাপের উপযোগিতা আজ বিজ্ঞানসম্মতভাবেই স্বীকৃত।
সাপ ছাড়া সরীসৃপ গোত্রীয় কুমিরের চিত্র আঁকা হয়, আঁকা হয় মকরের ছবি। ভাদুলী ব্রতের আলপনায় ব্রতিনীর জলযাত্রী বাপ-ভাই যাতে নদী-সমুদ্রে কুমিরের আক্রমণ থেকে রেহাই পায় সেজন্য কুমিরের ছবি আঁকা হয়৷
বিবাহকেন্দ্রিক আলপনায় নানান রকমের জোড়াফুল আঁকা হয়; আঁকা হয় পদ্মফুল, ভ্রমর, নানান রকম প্রজাপতি। অন্নপ্রাশনের আলপনায় নবজাতকের শৌর্য-বীর্য, বল ও ঐশ্বর্যের প্রাচুর্যের কামনার দ্যোতক হিসাবে আঁকা হয় বাঘ, সিংহ, হাতি, ঘোড়া প্রভৃতি প্রাণি। আর ঐহিক সমৃদ্ধি এবং পারিবারিক স্বাচ্ছন্দ্যের প্রকাশ হিসাবে আঁকা হয় ধান।
সমৃদ্ধির কামনাত্মক ব্রতে যুগপৎ অর্থনৈতিক চেতনা এবং বিশ্বাস-সংস্কারের আবহে আলপনাগুলিতে মাছ (সধবার প্রতীক), কলাগাছ, পানপাতা (স্বামী সোহাগের প্রতীক) এবং কড়ি (যৌন আকাঙ্ক্ষা এবং সন্তান উৎপাদনের প্রতীক) আঁকা হয়। কামনাত্মক আলপনায় মাছের ব্যবহারের অর্থ হচ্ছে সিঁথির সিঁদুরকে অক্ষুণ্ণ রাখা।
নানন্দিক আলপনায় আঁকা হয় নানান রকমের লতা এবং বৃক্ষজাতীয় উদ্ভিদের যৌথ-প্রকাশের প্রতিরূপ। যেমন — কলমীলতা, কলালতা, চাঁপালতা, দোপাটিলতা, চালতালতা, মোচালতা, শিসলতা, কলাছড়ি ইত্যাদির ছবি। চারিদিকে বৃত্তাকারে লতার বেড়ি, আর ভেতরে পদ্মমণ্ডল। কেন্দ্রে চিত্রিত পদ্মকে ঘিরে আলপনা আঁকার এই রীতিকে বলা হয় ‘পদ্মচক্র’। এর মধ্যে শিল্পীমনের সহজাত অভিব্যক্তি, বাস্তব ও কল্পনা সব মিলে মিশে যেন একাকার হয়ে গেছে।
মাঘমণ্ডল ব্রতের আলপনায় দেখা যায় বিবিধ মাঠের ফসলের নকশা; কোনটি ডালশস্য, কোনোটি তৈলবীজ বা তণ্ডুল ফসল। যেমন — ধান, গম, মুসুরি, সরষে, মাষকলাই, মটর, ছোলা, খেসারি প্রভৃতি ফসল। অনেক সময় এই আলপনার সঙ্গে বেলের আঠা দিয়ে এইসমস্ত ফসলের দানাগুলি লাগিয়ে সুন্দর করে নকশা করা হয়৷
বেলপুকুর ব্রতের আলপনায় অনেকসময় বটগাছ, বেলগাছ সহ নানান গাছের ছবি চিত্রিত হয়। হয়তো দেখা যায় গ্রামবাঙ্গলায় পুকুরপাড় জুড়ে থাকা গাছগুলিই এই আলপনার ছবিতে নীরব অভিব্যক্তি হয়ে ধরা পড়ে। তেমনই অশথপাতা ব্রতের আলপনায় অশ্বত্থ পাতার ছবি চোখ পড়ে। চৈত্র সংক্রান্তি থেকে শুরু করে বৈশাখ সংক্রান্তি পর্যন্ত তুলসীতলায় ঝারা দিয়ে সেচের বন্দোবস্ত করে পালিত বসুধারা ব্রতের আলপনায় তুলসীগাছের ছবি আঁকা হয়৷
আলপনায় পূর্ণ বিকশিত পদ্ম, শঙ্খপদ্ম, যুগ্মপদ্ম, সবগুলিই আসলে উর্বরতার প্রতীক। তা নারী প্রত্যঙ্গের প্রতীকী ব্যঞ্জনা নিয়ে চিত্রায়িত হয়েছে। কখনও দেখা যায় প্রস্ফুটিত পদ্ম, কখনও পীনোন্নত পদ্মের কুঁড়ি। অনেকের মতে, বাঙ্গলার আলপনায় পদ্মের উপস্থিতি অজন্তার গুহাচিত্রের আদলে অঙ্কিত হচ্ছে। তবে তার আগে থেকেই এই পদ্ম-সংস্কৃতির উদ্ভব বলে মনে করা যায়। কারণ পদ্মফুল বাঙ্গলায় একটি অতি পরিচিত এবং ব্যবহার্য ফুল। বৌ-ছত্রের আলপনায়, ‘ঘট-লাজ’-এর আলপনায় পদ্ম অঙ্কন আবশ্যিক। লক্ষ্মীপূজার আলপনায় পদ্মের উপস্থিতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেবী পদ্মাসনা। মনসা পূজার আলপনাতেও পদ্ম আঁকার প্রবণতা দেখা গেছে। দেবী মনসার নাম ‘পদ্মাবতী’।
লক্ষ্মীপূজার আলপনায় পেঁচা প্রায় আবশ্যিক। তবে এলাকাভেদে অঙ্কিত পেঁচার আদল ভিন্ন — কোথাও উড়ন্ত, কোথাও স্থির-নিশ্চুপ। যেমন লক্ষ্মীপিঁড়ির আলপনায় স্থির পেঁচার ছবি। পেঁচা ছাড়া আলপনায় ময়ূর, হাঁস, কাকের ছবি পাওয়া যায়। সুবচনী ব্রতের আলপনায় এক ঝাঁক হাঁস আঁকতে হয়। সেই হাঁসের ছবিতে দ্রুত হেঁটে যাওয়ার ভঙ্গিতে যদি হাঁস পাখা মেলে ধরে, তাতে যেমন দেখতে লাগে, তেমন করেই আঁকার প্রবণতা। নবান্নের আলপনায় আগে আঁকা হতো দাঁড়কাকের ছবি। কার্তিকপূজার আলপনায় আঁকা হয় ময়ূরের ছবি। আলপনায় কাল্পনিক পাখির ছবির সন্ধান পাওয়া যায়। যেমন ‘ডুমখোর’, ‘হেঁচি-করকচি’, ‘গোড়াগুড়ি’ প্রভৃতি। এটাকে ‘লোকসংস্কৃতির কল্পনা-বিলাস’ বলা হলেও বাস্তবের সঙ্গে এই ঠাঁটের যথেষ্ট মিল আছে৷ আমরা লৌকিক ছড়াতেও দেখেছি হাট্টিমাটিম, লটকুনো, হীরামন প্রভৃতি পাখির প্রসঙ্গ। এরমধ্যে হাট্টিমাটিম সম্ভবত হুতোম পেঁচা। গবেষণার মাধ্যমে বাকি পাখিগুলির সন্ধান পাওয়া যেতে পারে।
পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোণা এলাকায় লক্ষ্মীপূজার আলপনায় শেয়ালের ছবি আঁকা হয়। এদিকে দক্ষিণ দামোদর অঞ্চলে শেয়াল লক্ষ্মীর বাহন বলে পরিচিত। অনেকসময় বনের উপান্তে বসবাসকারী মানুষ বন্য জন্তু জানোয়ারের হাত থেকে রেহাই পেতে বন্যপ্রাণের ছবি আঁকে এবং প্রার্থনা করে। এভাবেই কোথাও কোথাও বাঘ, হাতি, চিতা, নেকড়, বিষধর সাপের ছবি আঁকা হতে থাকে।
বিভিন্ন ব্রতের আলপনায় যে সমস্ত জৈববৈচিত্র্যের ছবি আঁকা হয়, তার মধ্যে বাঙ্গালার অঙ্গনাদের গোয়ালভরা গরু-ছাগলের স্বপ্ন ফুটে উঠেছে। ফুটেছে গবাদি পশুর কামনা। অঙ্গনারা চেয়েছে পুকুরভরা মাছ, উঠোনভরা পক্ষী-সম্পদ। আলপনায় রয়েছে পরিবেশ ভাবনার নিদর্শন। চন্দ্র, সূর্য, তারা, নদী, সমুদ্র, পর্বত, বনানী এবং জৈববৈচিত্র্য নিয়েই যাবতীয় চিত্রকল্প। যা আঁকা হয়, তা স্থানীয় লোকশিল্পীর চেনা-পরিচিত জগতের ছবি। সবমিলিয়ে সহজাত নান্দনিকতায় হয়ে উঠেছে শিল্পী মনের অপূর্ব চলচ্চিত্র।
তথ্যসূত্র:
১. আলপনার জৈববৈচিত্র্য, মনাঞ্জলি বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কল্যাণ চক্রবর্তী (২০০৫), লোকসংস্কৃতি গবেষণা ১৮(১): ৬৯-৭৫
২. বাংলার জৈববৈচিত্র্য ও লোকসংস্কৃতি, মনাঞ্জলি বন্দ্যোপাধ্যায় (২০২৪), কবিতিকা, মেদিনীপুর।
[International Day for Biological Diversity (22nd May, 2024) উপলক্ষে লিখিত প্রবন্ধ।]
ড. মনাঞ্জলি বন্দ্যোপাধ্যায়