উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না রাজভবনের! এত দিন রাজ্য সরকারের সঙ্গে রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের লাগাতার দ্বন্দ্ব দেখা গিয়েছে। শনিবার তাঁর বিরুদ্ধে নতুন অভিযোগ করলেন শিক্ষাবিদদের একাংশ। তাঁদের অভিযোগ, রাজ্যের ছ’টি বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তর্বর্তী উপাচার্য নিয়োগের লক্ষ্যে ওই আমন্ত্রণ জানিয়েও রাজ্যপাল দেখা করেননি। বিষয়টি নিয়ে নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তৃণমূলপন্থী শিক্ষক-অধ্যাপক সংগঠনগুলিও উষ্মা প্রকাশ করেছে। যদিও রাজভবন বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, আগামিকাল, সোমবার সরকারের তালিকা থেকে আরও কয়েক জন শিক্ষাবিদকে
ডাকা হবে।
সূত্রের খবর, যাঁদের সোমবার রাজভবনে ডাকা হয়েছে, তাঁরা হলেন, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য মানস স্যানাল, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য নির্মাল্য চক্রবর্তী, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পবিত্র চট্টোপাধ্যায়, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রূপকুমার বর্মণ এবং উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজ়িটিং প্রফেসর প্রেম পোদ্দার।
সূত্রের আরও দাবি, আট জন শিক্ষাবিদকে ডাকা হলেও তার মধ্যে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অমিতাভ দত্ত এবং সেন্টার ফর স্টাডিজ় ইন সোশ্যাল সায়েন্সেস-এর প্রাক্তন অধিকর্তা তপতী গুহ ঠাকুরতা-সহ তিন জন রাজভবনে যাননি। গিয়েছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রাক্তন উপাচার্য রঞ্জন চক্রবর্তী, সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অনুরাধা মুখোপাধ্যায়, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ভাস্কর গুপ্ত, গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৌরীন বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যপালের বদলে তাঁদের সঙ্গে দেখা করেন রাজ্যপালের অধীনস্থ এক অফিসার। তিন জন শিক্ষাবিদ কলকাতার মধ্যে কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব নিতে রাজি আছেন বলে জানিয়েছেন। ভাস্কর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং সৌরীন গৌড়বঙ্গের দায়িত্ব নিতে আগ্রহী বলেও জানিয়ে এসেছেন। রাজভবনের বিবৃতিতেও শিক্ষাবিদদের নিজেদের পছন্দসই বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আগ্রহ প্রকাশের কথা বলা হয়েছে।
শিক্ষাবিদদের ডেকে রাজ্যপাল ‘দেখা না করায়’ শিক্ষামন্ত্রী তাঁর এক্স হ্যান্ডল-এ (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, ‘‘জানা গিয়েছে, আচার্য আজ কিছু বিশিষ্ট শিক্ষাবিদকে রাজভবনে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। আচার্য তাঁর অতিথিদের সঙ্গে দেখা করেননি বলেই খবর।..এ ভাবে তিনি শুধু ভারতীয় আতিথেয়তার মৌলিক সংস্কৃতিতেই কলুষিত করেননি, আমাদের রাজ্যের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদেরও এই প্রক্রিয়ায় নিরুৎসাহিত করেছেন। বাংলার শীর্ষ শিক্ষাবিদদের সঙ্গে তিনি এভাবেই আচরণ করেন! #লজ্জা!’’
তৃণমূলের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি (ওয়েবকুপা) বিবৃতি প্রকাশ করে বিষয়টিকে ‘অসৌজন্যমূলক, প্রথাবিরোধী এবং অপমানজনক’ বলেছে। ‘দ্য এডুকেশনিস্টস ফোরাম’-এর পক্ষে ওমপ্রকাশ মিশ্র বলেন, ‘‘রাজ্যপাল শিক্ষাবিদদের অপমান করছেন। ধিক্কার জানাই।’’ এর সঙ্গে প্রতিবাদ জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (ওয়েবকুটা)।