দুধেই ছিল বিষ? আজও রহস্যে ঘেরা লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর মৃত্যু

ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী। ভারতজুড়ে পালিত হচ্ছে এই প্রয়াত প্রধানমন্ত্রীর ১১৬তম জন্মবার্ষিকী। যথারীতি তাঁর ছবিতে মালা চড়িয়ে গুণগান করেছেন শাসক ও বিরোধী উভয় শিবির। তবে ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী শাস্ত্রীর মৃত্যু প্রসঙ্গ উঠলেই সবাই মুখে কুলুপ আঁটেন। কি হয়েছিল সেদিন? কিসের বা কার ভয়ে সবাই আজও চুপ? মেলেনি এসব প্রশ্নের উত্তর।

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর তাসখন্দের ঘটনাবলীর ওপর নজর দিলেই কিছুটা হলেও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ১৯৬৬ সালের ১০ জানুয়ারি তাসখন্দ চুক্তি স্বাক্ষর করেন শাস্ত্রী। এর কয়েক ঘণ্টা পরই রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয় তাঁর। হৃদরোগে মৃত্যু হয়েছিল, নাকি তাঁকে বিষ দেওয়া হয়, এই প্রশ্নের উত্তর আজও মেলেনি। অজ্ঞাত কারণে বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়।

লালবাহাদুর শাস্ত্রীর মৃত্যু নিয়ে রয়েছে নানা জল্পনা। অনেক প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি আজও। ফলে ‘জয় জওয়ান, জয় কিষান’ মন্ত্রের হোতা শাস্ত্রীর মৃত্যু নিয়ে জনমানসে আজও রয়েছে অসীম কৌতূহল। শাস্ত্রীর রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে অটলবিহারী বাজপেয়ী থেকে শুরু করে জর্জ ফার্নান্ডেজ সহ অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন। কিন্তু ক্ষমতায় থাকাকালীন সেই রহস্য উন্মোচনের চেষ্টা সেই কেউই করেননি।

শাস্ত্রীর মৃত্যুর পর ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী গুলজারিলাল নন্দার দ্বারস্থ হয়েছিলেন পরিবারের লোকজন। ময়না তদন্তের দাবিও জানিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সেই দাবি খারিজ করে দেন নন্দা। এরপর থেকেই বাতাসে ভাসতে শুরু করে নানা গুঞ্জণ। তবে বলা বাহুল্য, ধোঁয়া থাকলে আগুন থাকবেই।

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের শেষে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যস্ততায় তাসখন্দে (বর্তমান উজবেকিস্তানের রাজধানী) ১০ জানুয়ারি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করে দুই দেশ। সেখানেই একটি বাড়িতে শাস্ত্রীর রাত্রী যাপনের ব্যবস্থা করেছিল সোভিয়েত সরকার। চুক্তি স্বাক্ষরের পর বাড়িতে ফিরে আসেন শাস্ত্রী। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ভারতের রাষ্ট্রদূত টি এন কাউল। সেই রাতে কাউলের নিজস্ব রাঁধুনি জান মোহাম্মদের হাতের খাবার খেয়েছিলেন শাস্ত্রী। রাত ১১.৩০ মিনিটে জান মোহাম্মদের এনে দেওয়া এক গ্লাস দুধও খান তিনি। তারপরই রাত ১ টা ৩০ মিনিট নাগাদ অসুস্থ বোধ করেন তিনি। তড়িঘড়ি করে তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসককে খবর দেওয়া হয়। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ।

এদিকে, সোভিয়েত গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবি শাস্ত্রীকে বিষ দেওয়া হয়েছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল। গ্রেপ্তার করা হয় শাস্ত্রীর রুশ খানসামা আহমেদ সাতারভকে। এমনকি মরদেহ দেশে ফিরলে দেখা যায় নীল হয়ে গেছে শাস্ত্রীর শরীর। কিন্তু এতকিছু ঘটা সত্ত্বেও অদ্ভুতভাবে ময়নাতদন্তে বাদ সাধেন গুলজারিলাল নন্দা। রহস্যজনকভাবে গাড়ি চাপা পড়ে মারা যান শাস্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও তাঁর দুই ছেলে। শাস্ত্রীর মৃত্যু নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক কুলদীপ নায়ার। এ ছাড়াও শাস্ত্রীর মৃত্যুর অন্যতম সন্দেহভাজন জান মোহাম্মদকে রাষ্ট্রপতি ভবনে কাজে নিয়োগ করা হয়। এ সব কারণে আজও রহস্যে ঘেরা লালবাহাদুর শাস্ত্রীর মৃত্যু।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.