আজ পয়লা অগস্ট, আজ থেকে ৭৩ বছর আগে, আমাদের দেশের এক রক্তরঞ্জিত ইতিহাসের রচনা হয়েছিল। পয়লা অগস্ট থেকে পনেরোই অগস্ট, এই পনেরো দিনে ভারতের ভূগোল ও ইতিহাস দুইই পরিবর্তিত হয়ে গেছিল। ঐ পনেরো দিনের ঘটনাবলী এখন পুস্তকাকারে অনলাইন গ্রন্থাগারে হিন্দিতে ‘ওয়ে পন্দরাহ্ দিন’ নামে পাওয়া যাচ্ছে।
শুক্রবার, ১৯৪৭ সালের পয়লা অগস্ট হঠাৎ করেই এক গুরুত্বপূর্ণ দিনে পরিণত হয়। কাশ্মীরে এই দিনে এমন দুটি ঘটনা ঘটে যা, যা আপাতদৃষ্টিতে সম্পর্করহিত হলেও, আগামী দিনের মহত্ত্বের নিরিখে ঘটনাদুটির গুরুত্ব পরবর্তী দেশভাগের ঐতিহাসিক দলিলে আবশ্যিকভাবে স্থান অধিকার করবে।
পয়লা অগস্ট মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী শ্রীনগরে পৌঁছন। প্রথমবারের জন্য কাশ্মীরের মাটিতে পা রাখেন তিনি। এর আগে ১৯১৫ সালে, যখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলছিল, যখন মোহনদাস দক্ষিণ আ্ফ্রিকা থেকে ভারতে প্রত্যাবর্তন করেন, যখন রাজা হরি সিং বিংশ বর্ষীয় যুবা, তখন তিনি মোহনদাসকে কাশ্মীরে যাওয়ার জন্য ব্যক্তিগতভাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কিন্তু ১৯৪৭ সালে যখন পরিস্থিতির নাটকীয় পরিবর্তন ঘটেছিল, তখন রাজা হরি সিং ও জম্মু কাশ্মীর প্রশাসন মোহনদাসের কাশ্মীরে আগমন কোনোভাবেই চাননি। স্বয়ং রাজা হরি সিং ভাইসরয় মাউন্টব্যাটেনকে এক পত্রে জানিয়েছিলেন,
‘সমস্ত দিক ও পরিস্থিতি বিচার বিবেচনা করে, আমি আপনার কাছে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি যে এখন কোনোভাবেই মোহনদাসের কাশ্মীর আগমন অভিপ্রেত নয়, এবং ওনার কাশ্মীর আগমন রদ করা উচিত। ওনাকে যদি কাশ্মীর আসতেই হয়, তবে উনি যেন শরৎকালের পর আসেন। আমি আরো একবার আবেদন করছি যে মোহনদাস বা অন্য কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তির কাশ্মীর আগমন অনভিপ্রেত, যতদিন না কাশ্মীরের অবস্থার উন্নতি ঘটছে।‘ বলা যেতেই পারে, এই ঘটনাটি গৃহস্বামীর আপত্তি সত্ত্বেও, জোর করে গৃহস্বামীর গৃহে অতিথি হওয়ার সমতুল।যদিও মোহনদাস গান্ধী খুব ভালো ভাবেই জানতেন, কাশ্মীর ভারত ও পাকিস্তান উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রেসটিজ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
স্বাধীনতার একপক্ষকাল আগেও যখন কাশ্মীর কোন দেশের পক্ষে যোগদান করবে তার ঘোষণা করেনি, তখন গান্ধী চাননি ওনার কাশ্মীর যাত্রাকে যেন কোনোভাবেই কাশ্মীরকে ভারতে যোগদানের জন্য ক্যাম্পেন হিসেবে না দেখা হয়, যা তার নির্মিত ইমেজ ও দৃষ্টিভঙ্গীর পরিপন্থী হত। ২৯ শে জুলাই কাশ্মীর যাত্রার পূর্বে নিজের নিয়মিত প্রার্থনা সভায় উনি বলেছিলেন, ‘আমি কাশ্মীরের মহারাজের কাছে এটা বলতে যাচ্ছি না, যে আপনি ভারতে সামিল হন, বা পাকিস্তানে সামিল হন। কারণ কাশ্মীরের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার একমাত্র কাশ্মীরের অধিবাসীদের আ্ছে, এবং তারাই নির্ণয় করবে তারা কোন দেশে যোগদান করবে। আর এইজন্যেই আমি কাশ্মীরে কোনো রকম সার্বজনীন অনুষ্ঠান করবো না, এমনকি প্রার্থনাও ব্যক্তিগতভাবে করবো।‘
গান্ধী রাওয়ালপিন্ডির পথে পয়লা অগস্ট কাশ্মীরের শ্রীনগরে প্রবেশ করেন। মহারাজা ওনাকে আমন্ত্রণ না করায় উনি কিশোরীলাল সেঠীর গৃহে অবস্থান করেন। ওনার গৃহ ভাড়ায় নেওয়া হলেও, বেশ বড় গৃহ ছিল, যা বর্তমানের বোন ও জয়েন্ট হাসপাতালের সন্নিকটে অবস্থিত ছিল। সেঠীবাবু জঙ্গলের ইজারাদার ছিলেন, ও কাশ্মীরের কংগ্রেস ও ন্যাশনাল কনফারেন্সের কাছের লোক ছিলেন। কিন্তু এই সময় রাজার বিরুদ্ধে চক্রান্তের অভিযোগে শেখ আবদুল্লা সহ ন্যাশনাল কনফারেন্সের বহু নেতাকে বন্দী করা হয়েছিল বা কাশ্মীর থেকে বহিস্কার করা হয়েছিল। এর জন্যেই বকশী গুলাম মহম্মদ সাদিক ও খোয়াজা গুলাম মহম্মদ, ন্যাশনাল কনফারেন্সের দুই নেতা গান্ধীর কাশ্মীর আগমনের সময় চকলালার কোহলা পোল অবধি পৌঁছে দিয়ে আবার লাহোর ফিরে যায়। গান্ধীর সাথে ওনার সচিব পেয়ারেলাল ও তাঁর দুই ভাইঝি সহযাত্রী ছিলেন। শ্রীনগরে প্রবেশ করে কিশোরীলালের গৃহে বিশ্রাম নিয়ে উনি সহযাত্রীদের সাথে সরোবরে ভ্রমণ করতে যান।
গান্ধীর এই সফরে সম্পূর্ণ সময়কালেই ন্যাশনাল কনফারেন্সের কার্যকর্তারা ওনার চারিদেকে ভিড় করে ছিল। শেখ আবদুল্লা জেলবন্দী থাকলেও নেহরুর প্রাণের বন্ধু হওয়ার কারণে নেহরুর নির্দেশে শেখ আবদুল্লার বেগম ও তার সাথীরা গান্ধীর সফরের সমস্ত ব্যবস্থাপনা সম্পন্ন করেছিল। রাজার প্রতিনিধি রুপে প্রশাসনিক প্রধান রামচন্দ্র কাক, যিনি রাজা হরি সিং অত্যন্ত বিশ্বস্ত ছিলেন গান্ধীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন, যিনি আবার নেহরুর ‘ঘৃণার সূচী’তে সর্বপ্রথম স্থান অধিকার করতেন। এর কারণ হীসেবে বলা যায়, যখন ১৫ ই মে, ১৯৪৬ সালে কাশ্মীরবিরোধী ষড়যন্ত্রের জন্য শেখ আবদুল্লাকে বন্দী করা হয়, তখন নেহরু শেখের হয়ে মামলা লড়বার জন্য উকিল হিসেবে কাশ্মীর যাত্রার ঘোষণা করলে, রামচন্দ্র কাক নেহরুর কাশ্মীর প্রবেশ নিষিদ্ধ করেন, এবং মুজফফরাবাদের সন্নিকটে নেহরুকে গ্রেফতারও করেন। রামচন্দ্র কাকা রাজা হরি সিং এর একটি সিল করা পত্র গান্ধীকে দেন, যাতে রাজা হরি সিং এর গৃহ ‘হরিনিবাস’ এ ৩ রা অগস্ট দেখা করবার কথা বলা হয়েছিল।
নেহরুর নির্দেশ অনুযায়ী গান্ধীর এই পুরো সফরেই ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতা ও কার্যকর্তা দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিলেন। শেখ আবদুল্লার অনুস্থিতির কারণে ওনার বেগম আকবর জাহান ও কন্যা খালেদা তিনদিনের প্রবাসে বহুবার গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, কিন্তু গান্ধী এই তিনদিনে একজনও জাতীয়তাবাদী হিন্দু নেতার সঙ্গে দেখা করেননি।
পয়লা অগস্ট আরো এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা আকার নিতে শুরু করে যাকে কেন্দ্র করে পরবর্তীতে ভারতীয় উপমহাদেশে অসন্তোষ ও অশান্তির আবহ বজায় থাকবে দীর্ঘদিন ধরে। এই ঘটনাও কাশ্মীরের এক অংশকে নিয়ে। মহারাজা হরি সিং এর নেতৃত্বে কাশ্মীর এক বড় রাজ্য ছিল, ১৯৩৫ সালে কাশ্মীর রাজ্যের একাংশকে গিলগিট এজেন্সী নাকে আলাদা করে নিয়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করা হয়।
সত্যি বলতে, সম্পূর্ণ অখন্ড কাশ্মীরকে ভূস্বর্গই বলা যায়, এবং সামরিক ও কূটনৈতিক দৃষ্টিতে কাশ্মীরের গুরুত্ব অপরিসীম। তিন দেশের সীমান্ত এই রাজ্যের সাথে ছিল, ১৯৩৫ এ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রভাবক্ষেত্র কাশ্মীর থেকে দূরে থাকলেও বিশ্ব রাজনীতির দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছিল, রাশিয়ার শক্তি বাড়ছিল, তাই রাশিয়ার সীমান্তবর্তী গিলগিটকে ব্রিটিশরা হরি সিং এর কাছ থেকে গিলগিট ছিনিয়ে নিয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্তির পর যখন ব্রিটিশদের অবস্থা সঙ্গীন হয়ে পড়ে, তখন গিলগিট বাল্টিস্তানের মত দুর্গম এলাকা দুর্বল ব্রিটিশদের নিজেদের দখলে রাখবার কোন ইচ্ছে ছিল না। এই কারণে, ভারতকে স্বাধীনতা দেওয়ার আগে, পয়লা অগস্টেই গিলগিট প্রদেশ আবার রাজা হরি সিং কে প্রত্যার্পণ করে। পয়লা অগস্ট, ১৯৪৭ সালের সূর্যোদয়ের সাথে সাথেই গিলগিট বাল্টিস্তানের সমস্ত জেলা সদরে ইউনিয়ন জ্যাক নামিয়ে কাশ্মীরের রাজপতাকা উত্তোলন করা হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, রাজা হরি সিং কি আদৌ প্রস্তুত ছিলেন গিলগিট পুনরায় ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য।
গিলগিটের সুরক্ষার জন্য ব্রিটিশরা ‘গিলগিট স্কাউট’ নামে এক ব্যাটেলিয়ান নিয়োগ করেছিল, যার মধ্যে কিছু ব্রিটিশ অফিসার ছাড়া প্রায় সমস্ত সৈনিকই মুসলমান ছিল। হস্তান্তরকরণের সাথে সাথে মুসলমানদের এই ফৌজ রাজা হরি সিং এর তত্ত্বাধানে চলে আসে, রাজা হরি সিং ব্রিগেডিয়ার ঘনসারা সিংহকে গিলগিটের গভর্নর রুপে নিযুক্ত করেন, আর ওনাকে সহযোগিতা করবার জন্য মেজর ডব্লিউ এ ব্রাউন ও ক্যাপ্টেন এস মেথিসন কে অফিসার হিসেবে নিযুক্ত করেন। গিলগিট স্কাউটের সুবেদার অর্থাৎ মেজর বাবর খানও এদের সাথে ছিল। এই নিযুক্তিকরণের সময় রাজা হরি সিং বিন্দুমাত্র ধারণা করতে পারেননি মাত্র দুই তিন মাসের মধ্যে গিলগিট স্কাউট তাঁর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে। এরকমই ঘটেছিল পরবর্তীতে এবং গভর্নর ঘনসারা সিংকে বন্দী করে নিয়েছিল এই বিশ্বাসঘাতকরা। পয়লা অগস্ট, ১৯৪৭ এ গিলগিটের হস্তান্তর ভবিষ্যতের ঘটনাপ্রবাহকে নির্দিষ্ট করে দিয়েছিল।
অখন্ড ভারতের খন্ডিত স্বাধীনতা যখন দোরগোড়ায়, তখন পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে প্রচন্ড ও পরিকল্পিত নরসংহারের ঘটনা ঘটছিল। স্বাধীনতা ও দেশভাগের দিন যত এগিয়ে আসতে থাকবে, হিংসা ও গণহত্যাও ততই বাড়তে থাকবে, ব্রিটিশ অফিসারদের এই অনুমান ছিলই, তাই তারা হিন্দু, মুসলিম ও শিখদের নিয়ে সম্মিলিত সেনাবাহিনী গঠনের প্রস্তাব রেখেছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ‘পাঞ্জাব বাউন্ডারি ফোর্স’ নামক সেনা বাহিনী গঠন করা হয়েছিল। এই বাহিনীতে এগারো ইনফ্রান্টি ও পঞ্চাশ হাজার সৈনিক ছিল, যার নেতৃত্বে ছিলেন চার ব্রিগেডিয়ার, মহম্মদ আয়ুব খান, নাসির আহমদ, দিগম্বর বরার ও থিমাইয়া। পয়লা অগস্টের দিনে লাহোরের অস্থায়ী মুখ্য কার্যালয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কিন্তু কারো ধারণায় ছিল না মাত্র পনেরো দিনের মধ্যে পাঞ্জাব বাউন্ডারী ফোর্সের মুখ্য কার্যালয় ভস্মীভূত হয়ে যাবে?
এই সব ঘটনাপ্রবাহের মধ্যেই সুদূর কলকাতায় নতুন এক নাটক রচিত হচ্ছিল।
কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি সুভাষচন্দ্র বসুর জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা শরৎচন্দ্র বসু কংগ্রেস থেকে পদত্যাগ করেন পয়লা অগস্টে। শরৎচন্দ্র বসু এক বিরাট ব্যক্তত্বের অধিকারী ছিলেন, দীর্ঘ চল্লিশ বছর কংগ্রেসের এক আন্তরিক ও বিশ্বস্ত সৈনিক হিসেবে পরিচিত ছিলেন, ১৯৩০ সালের ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের রিপোর্টে ওনার নামোল্লেখ ছিল। শরৎচন্দ্র বসু ও জহরলাল নেহরুর মধ্যে সাদৃশ্য ছিল অনেক, দুইজনেরই জন্ম ১৮৮৯ সালে, দুজনেরই শিক্ষা ইংলন্ডে, দুজনেই আইনের ডিগ্রী ইংলন্ড থেকেই করেছিলেন, যুবাবস্থায় দুজনেই বামপন্থী মনোভাবাপন্ন ছিলেন, পরবর্তীতে দুজনেই কংগ্রেসে সক্রিয়ভাবে যোগদান করেন, দুজনের পারস্পরিক সম্পর্কও ভালো ছিল।
১৯৩৭ সালে বাংলার প্রাদেশিক নির্বাচনে কংগ্রেস সর্বাধিক ৫৪টি সিটে জয়লাভ করে, দ্বিতীয়স্থানে কৃষক মজদুর পার্টি ও মুসলিম লিগ দুই দলই ৩৭টি সিটে জয়লাভ করে। বঙ্গ কংগ্রেসের প্রতিনিধি হিসেবে শরৎচন্দ্র বসু নেহরুর কাছে প্রস্তাব রাখেন কংগ্রেস ও কৃষক প্রজা পার্টির সংযুক্ত সরকার গঠনের জন্য, যা জহরলাল নাকচ করে দেন।
সর্বাধিক সিটে জয়লাভ করা সত্ত্বেও কংগ্রেসকে বিরোধীপক্ষে বসতে হয়, সরকার গড়ে মুসলিম লিগ ও কৃষক মজদুর পার্টি। ‘শের-এ-বঙ্গাল’ নামে পরিচিত ফজলুল হক বঙ্গের প্রধানমন্ত্রী হন, ঐ সময় থেকেই বাংলাব কংগ্রেসের শক্তি ক্রমশঃ কমতে শুরু করে। এর নয় বৎসর বাদে এই ভুলের পরিণামে মুসলিম লিগের কট্টরপন্থী নেতা সুহারাবর্দী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ পায়, যে ১৯৪৬ সালের ‘ডিরেক্ট আ্যকশন ডে’র দিনে ৫০০০ হিন্দুর গণহত্যার জন্য দায়ী।
শরৎবাবু উপরোক্ত ঘটনায় ব্যথিত ছিলেন, সময়ে সময়ে কংগ্রেস নেতৃত্ব বিশেষতঃ নেহরুকর জানানো সত্ত্বেই কোনো প্রকার সমাধান হয়নি। ১৯৩৯ এর ত্রিপুরী (জব্বলপুর) অধিবেশনে কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচনে নেহরু সু্ভাষ বোসের বিরুদ্ধে প্রচার করেন, এই কারণেও শরৎচন্দ্র ও নেহরুর সম্পর্কের অবনতি খুব স্বাভাবিক ছিল। এই ঘটনাপ্রবাহের ওপর কংগ্রেসের দ্বারা বঙ্গবিভাজনের প্রস্তাব স্বীকার করবার আঘাত যার ওপর শরৎ বাবুর কোনো ভূমিকা ছিল না। এইসব কারণে শরৎচন্দ্র বসু কংগ্রেসের চল্লিশ বছরের সম্পর্ক ত্যাগ করে ‘সোশালিস্ট রিপাবলিকান আর্মি’ নামে দল গঠন করে দেশভাগ, অরাজকতার, সাম্প্রদায়িকতার পরিবেশ সৃষ্টির জন্য কংগ্রেস নেতৃত্বের ব্যর্থতাকে দায়ী একথা জনগণের সম্মুখে আনেন।
পয়লা অগস্ট, ভারতের ইতিহাসে তীব্র ও প্রচন্ড দিনের শেষে দেখা যায় পুরো পাঞ্জাব জ্বলছে, হিংসার কবলে আক্রান্ত। সূর্য ডোবার সাথে সাথে অন্ধকারে পাঞ্জাব, বালুচিস্তান ও সিন্ধুপ্রদেশের শত শত গ্রামের জ্বলন্ত ঘরবাড়ির থেকে ওঠা লেলিহান অগ্নিশিখা দূর দূর থেকেও দেখা গেল। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের ৫৮০০০ স্বয়ংসেবক দিন রাত এক করে আক্রান্ত হিন্দু ও শিখদের রক্ষা করে যাচ্ছিলেন। ঠিক একইভাবে বঙ্গপ্রদেশের অবস্থাও দ্রুত অবনতি হচ্ছিল, সমগ্র বাংলা এগিয়ে যাচ্ছিল অরাজকতার দিকে।
স্বাধীনতা ও তার সাথেই দেশভাগ ও বিভাজন, আর মাত্র চৌদ্দদিন দূরে।