অর্ধকুম্ভে শাহি স্নান সেরেই ‘স্বচ্ছ কুম্ভ স্বচ্ছ আবহার’ অনুষ্ঠানে সাফাইকর্মীদের পা ধুয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ঝাঁটা হাতে সেই সাফাইকর্মীরাই এ বার বুক চিতিয়ে বিশ্বজয় করে ফেলল। মেলা প্রাঙ্গনের সব নোংরা ধুয়ে মুছে সাফ করে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম তুলে ফেললেন দশ হাজার সাফাইকর্মী। সেই সঙ্গে তৃতীয়বার বিশ্বরেকর্ডের পালক জুড়ে গেল কুম্ভমেলার মুকুটে।
তিন এক্কে তিন। একটা নয়, দু’টো নয়, এক্কেবারে তিন তিনটে বিশ্বরেকর্ড ঝুলিতে পুরে নিয়েছে প্রয়াগরাজের কুম্ভমেলা। তাও আবার তিন দিনের মধ্যেই। এ বারের কুম্ভমেলার আয়োজনও ছিল এলাহি। মেলা প্রাঙ্গণের আয়তন যেখানে হয় ১৬০০ হেক্টর, এ বার মেলার আয়তন ছিল প্রায় ৩২০০ হেক্টর। খরচের বহরও ছিল তাক লাগানো। সব মিলিয়ে মোট ৪২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথের সরকার।
ঝাঁ চকচকে মেলা প্রাঙ্গণে পুণ্যার্থীদের জন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা ছিল যেমন আঁটোসাঁটো, তেমনি পরিষেবাও ছিল চমৎকার। পুণ্যার্থীদের যাত্রা সুগম করার জন্য ৮০০ স্পেশাল ট্রেন চালু করেছিল ভারতীয় রেল। ন্যূনতম ভাড়ার রেল পরিষেবাই শুধু নয়, উত্তরপ্রদেশ রাজ্য ও সড়ক পরিবহনের তরফ থেকে দেওয়া হয়েছিল ৫০০ স্পেশ্যাল বাস। প্রয়াগরাজের নবাবগজ্ঞ টোল প্লাজা পর্যন্ত বিস্তৃত প্রায় ৩.২ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে সারি সারি দাঁড়িয়ে থাকা সেই বাসের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ার হাত ধরে ছেয়ে গিয়েছিল নেট দুনিয়ায়। এই বাস পরিষেবার জন্য ‘Largest parade of buses’, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি গিনেস বুকে নাম তোলে কুম্ভমেলা।
দ্বিতীয় পুরস্কার আসে প্রায় একই সময়। থিম ছিল হ্যান্ড প্রিন্টিং ‘Hand printing activity। ‘ ৬০ ফুট উঁচু একটা ক্যানভাসকে হাতের ছাপে ভরিয়ে দিয়েছিলেন আট থেকে আশি। নানা রঙ, নানা বয়স, সাফাইকর্মী থেকে সাধু-সন্ন্যাসী, কবি-লেখক-চিত্রকর-রাজনৈতিক নেতা থেকে মেলা প্রাঙ্গণের নিরাপত্তাকর্মী–সকলেই অংশগ্রহণ করেছিলেন এই রাঙিয়ে দেওয়ার প্রতিযোগিতায়।
হ্যান্ড প্রিন্টিংয়ে প্রথম বিশ্বরেকর্ড করে দক্ষিণ কোরিয়া। ৪,৬৭৫ জন সেখানে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তবে কুম্ভমেলার ব্যাপারই আলাদা। ক্যানভাস হাতের ছাপে ভরিয়ে দিতে যোগ দিয়েছিলেন ৭,৬৬৪ জন।
মেলা কর্তৃপক্ষের কথায়, এত বিস্তৃত মেলা প্রাঙ্গণে পুণ্যস্নান করতে জমায়েত হন লাখো মানুষ। তাই এই সময় মেলার মাঠ ও তৎসংলগ্ন এলাকা পরিষ্কার করা বেশ চ্যালেঞ্জিং। ২০ হাজারেরও বেশি ডাস্টবিন রয়েছে মেলায়, এক লক্ষেরও বেশি বাথরুম, এই সবকিছু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা যেমন সময়সাপেক্ষ, তেমনি কঠিন কাজ। তবে সাফাইয়ের এই কাজে পারদর্শীতা দেখিয়েছেন পুরুষ-মহিলা মিলিয়ে দশ হাজার সাফাইকর্মী। মেলার আনাচ, কানাচ ঝেঁটিয়ে একেবারে ঝকঝকে তকতকে করে দিয়েছেন তাঁরা। তাই গিনেস বুকে নাম তুলতে বেশি দেরি হয়নি।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় জমসমাবেশ এই কুম্ভমেলা। প্রতি ছ’বছর অন্তর যে মেলা হয় তাকে আগে বলত অর্ধ কুম্ভ। ১২ বছর অন্তর যে মেলা হয় তাকে বলত কুম্ভ। কিন্তু যোগী আদিত্যনাথের আমলে অর্ধ কুম্ভকে কুম্ভ ও পূর্ণ কুম্ভকে মহা কুম্ভ বলা শুরু হয়েছে।কুম্ভে স্নান করার পবিত্র দিন আছে কয়েকটি। মকর সংক্রান্তি (১৫ জানুয়ারি), পৌষ সংক্রান্তি (২১ জানুয়ারি), মৌনী অমাবস্যা (৪ ফেব্রুয়ারি), বসন্ত পঞ্চমী (১০ ফেব্রুয়ারি), মাঘী পূর্ণিমা (১৯ ফেব্রুয়ারি) এবং মহাশিবরাত্রি (৪ মার্চ)। ১৫ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া মেলা শেষ হচ্ছে ৪ মার্চ। তার আগেই তিনটে বিশ্বরেকর্ডের তকমা জুড়ে গেল প্রয়াগরাজের কুম্ভমেলার সঙ্গে।