এতদিন নির্বাচনী প্রচারে রাহুল গান্ধী ও কংগ্রেসকে নামদারদের দল বলে আক্রমণ করতেন মোদী। বলতেন, একটা পরিবার ৬০ বছর ধরে ভারতের গরিব মানুষের টাকা লুঠ করে নিজেদের সম্পত্তি বাড়িয়েছে। অন্যদিকে বিজেপির বিরুদ্ধে নির্বাচনী প্রচারে কংগ্রেস সভাপতির প্রধান অস্ত্র রাফায়েল। রাহুল অভিযোগ করেন, মোদী রাফায়েল দূর্নীতি করে দেশের টাকা লুঠ করছেন। এ বার রাফায়েলের পাল্টা হিসেবে বফর্স প্রসঙ্গ তুলে আনলেন মোদী। সরাসরি আক্রমণ করলেন রাহুল গান্ধীর বাবা তথা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীকে। বললেন, “আপনার বাবাকে তাঁর পারিষদরা মিস্টার ক্লিন বলে ডাকত। কিন্তু তাঁর জীবন শেষ হয়েছিল ভ্রষ্টাচারী নম্বর ১ হিসেবে।”
সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশের প্রতাপগড়ে বিজেপির নির্বাচনী প্রচারে এই প্রসঙ্গ তুলে আনেন মোদী। মোদীর দাবি, রাহুল নাকি একটি সাক্ষাৎকারে স্বীকারও করেছেন, তাঁর প্রধান উদ্দেশ্য হলো মোদীর ভাবমূর্তি নষ্ট করা। তবে এ ভাবে তাঁর ভাবমূর্তি নষ্ট করা যাবে না বলেই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, “আমাকে খারাপ কথা বলে আমার ৫০ বছরের তপস্যাকে আপনি নষ্ট করতে পারবেন না। আমার ভাবমূর্তি খারাপ করে এঁরা চাইছেন দেশে একটি অস্থির সরকার তৈরি হোক। কিন্তু আমি কোনওভাবেই সেটা হতে দেব না। বিজেপির হাত ধরেই দেশের উন্নতি হবে।”
কংগ্রেসকে এ দিনও পরিবারতন্ত্র নিয়ে খোঁচা দিয়েছেন মোদী। হুঁশিয়ারির সুরে তিনি বলেন, “নামদাররা ভালো করে শুনে নিন, মোদী আপনাদের মতো সোনার চামচ মুখে দিয়ে জন্মায়নি। কোনও রাজার পরিবারেও জন্মায়নি। কঠিন পরিশ্রম ও অধ্যবসায় আমাকে আজ এই জায়গায় নিয়ে এসেছে। আর আপনারা কী করেছেন? শিল্প করে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে গরিব মানুষের জমি নিয়েছেন। তারপরে তা থেকে নিজের পকেট ভরেছেন। তাই আপনাদের মানুষ আর বিশ্বাস করবে না।”
এ দিনের সভা থেকে উত্তরপ্রদেশে সপা- বসপা জোটের কথাও তুলে আনেন মোদী। তাঁর বক্তব্য, অখিলেশ যাদব ও রাহুল গান্ধী মায়াবতীর ঘাড়ে বন্দুক রেখে খেলছেন। কিন্তু এতদিনে বসপা নেত্রী সেটা বুঝতে পেরেছেন। আর সে জন্য কংগ্রেসের বিরোধিতা শুরু করেছেন তিনি। মোদীর অভিযোগ, বিজেপির বিরুদ্ধে চক্রান্ত করতে কংগ্রেসের পূর্ব উত্তরপ্রদেশের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢড়া সমাজবাদী পার্টির বৈঠকে যাচ্ছেন। এতদিনে এই ‘মহামিলাওটি জোটের’ রূপ সবার সামনে চলে এসেছে। কংগ্রেসকে ‘ভোট কাটওয়া’ দল বলেও এ দিনের সভা থেকে কটাক্ষ করেন মোদী।
মোদীর এ দিনের সভার পর রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের বক্তব্য, মোদী এর আগেও কংগ্রেসকে পরিবারতন্ত্র কিংবা নামদার বলে কটাক্ষ করলেও কোনও দিন রাজীব গান্ধীর প্রসঙ্গ তুলে আনেননি। অন্যদিকে রাহুল গান্ধী মোদীকে বারবার রাফায়েল অস্ত্রে ধরাশায়ী করতে চেয়েছেন। সে সংসদ হোক, কি নির্বাচনী প্রচার, রাহুলের অভিযোগ, দেশের সুরক্ষার বিনিময়ে নিজের পকেট ভরেছেন মোদী। তাই এ বার শেষ পর্যন্ত বফর্সের প্রসঙ্গ তুলে আনলেন মোদী। রাজীব গান্ধী প্রধানমন্ত্রী থাকার সময়েই এসেছিল এই দুর্নীতির অভিযোগ। সরাসরি রাজীব গান্ধীর বিরুদ্ধেই উঠেছিল এই অভিযোগ। তাই রাহুল তথা কংগ্রেসকে ব্যাকফুটে ঠেলে দেওয়ার জন্যই রাজীব গান্ধীকে ‘ভ্রষ্টাচারী নম্বর ১’ বলে আক্রমণ করলেন মোদী, এমনটাই বক্তব্য পর্যবেক্ষকদের একাংশের।